‘সার্চ অ্যান্ড সিজার’ বোর্ড লাগানো গাড়ি নিয়ে জাতীয় ও রাজ্য সড়কে টাকা তুলছে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি
বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: গাড়ির সামনে ও পিছনে দু’টি বড় বোর্ড। তাতে লেখা, ‘সার্চ অ্যান্ড সিজার, এনফোর্সমেন্ট টিম’। এরকম বোর্ড লাগানো গাড়ি ছুটিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির কর্মীরা জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে রাজস্ব আদায় করছেন। পান থেকে শুঁটকি মাছ, কাজু বাদাম থেকে ধান, চাল এমনকী, গোরুর গাড়ি থেকেও টাকা তোলা হচ্ছে। তমলুক থেকে কাঁথি যাওয়ার পথে বাজকুল ফ্লাইওভারের সামনে ১১৬বি জাতীয় সড়কে আরএমসির একটি বুথ রয়েছে। সেখানে বোর্ড লাগানো ওই গাড়ি থাকে। কর্মীরা গাড়িতে বসে থাকেন। জাতীয় সড়কে কৃষিজ পণ্য এবং গোরুর গাড়ি দেখলেই ধাওয়া শুরু। যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গাড়িতে ‘সার্চ অ্যান্ড সিজার’ শব্দ নিয়ে আপত্তি ওঠছে।
যে কোনওরকম সার্চ এবং সিজার করার কাজে ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক। পুলিসকেও তাই করতে হয়। কিন্তু, আরএমসির কর্মীরা ভিডিওগ্রাফি করেন না। যেসব পণ্যসামগ্রী থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করার নিয়ম রয়েছে সেইসব গাড়ি দেখলেই ধাওয়া করা হয়। বাজকুল, দীঘা, এগরা এবং কোলাঘাট থানার অন্তর্গত হলদিয়া মোড়ে এরকম চারটি আরএমসির বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথে একটি করে গাড়ি থাকে। কর্মীরা গাড়িতে বসে থাকেন। গোরুর গাড়ি দেখলেও ধাওয়া শুরু হয়। যদিও আরএমসি কর্তৃপক্ষের দাবি, গোরুর গাড়ি থেকেও তাঁদের রাজস্ব আদায় করার নিয়ম আছে।
আগে আরএমসি রাস্তার উপর দড়ি বাঁধা বাঁশ টেনে কৃষিজ পণ্যবাহী গাড়ি থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করত। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রশাসনিক সভায় আরএমসির এভাবে টাকা আদায়ের সমালোচনা করেন। তারপরই রাজ্যজুড়ে বাঁশ ঘিরে টাকা আদায় প্রক্রিয়া বন্ধ। কিন্তু, রেভিনিউ আদায় বন্ধ হলে কর্মীদের মাইনে হবে কোথা থেকে? তাই ভ্রাম্যমাণ উপায়ে এটা আদায় করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটিতে মোট ১২০জন কর্মী আছেন। তাঁদের কারও বেতন কৃষি বিপণন দপ্তর থেকে হয় না। আরএমসির নিজস্ব তহবিল থেকে মাইনে দেওয়া হয়। নিজস্ব তহবিল তৈরির জন্য কৃষিজ পণ্য থেকে রাজস্ব আদায় করতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকেও আরএমসির বাঁশের গেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরিবর্তে বাজকুল, দীঘা, এগরা এবং কোলাঘাটে আরএমসি বুথ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি জায়গায় আরএমসির পক্ষ থেকে ড্রাইভার সহ গাড়ি ভাড়া নিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে সার্চ অ্যান্ড সিজার বোর্ড টাঙিয়ে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু, আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে গাড়িতে সার্চ অ্যান্ড সিজার শব্দ লেখা নিয়ে। কারণ, আরএমসির ওই কাজে ভিডিওগ্রাফি করা হয় না। এপর্যন্ত একটি মামলা হয়েছে এমন নজিরও নেই। শুধুমাত্র চাপ তৈরি করে রাজস্ব আদায়ের জন্য এরকম বোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা আদালতের সরকারি আইনজীবী বদ্রু আলম মল্লিক বলেন, সার্চ এবং সিজার করার সময় ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক। আরএমসি এভাবে বোর্ড লাগাতে পারে না। আরএমসির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সেক্রেটারি শ্যামল মান্না বলেন, গবাদি পশু সহ কৃষিজ পণ্য থেকে আমরা রেভিনিউ সংগ্রহ করি। আগে বাঁশের গেট থাকত। এখন ভ্রাম্যমাণ উপায়ে আদায় করা হয়। তবে, এজন্য গাড়ি ধাওয়া করা হয় না। সার্চ ও সিজারের সময় আমাদের ভিডিওগ্রাফি হয় না।