• সরকারি প্রকল্পের কাজ এজেন্সিকে, তুমুল বিক্ষোভ মহিলাদের
    বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: সমবায় গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য আসা সরকারি প্রকল্পের বরাত পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় এজেন্সিকে। বোর্ড মেম্বারদের না জানিয়ে তাঁদের সই জাল করে দিনের পর দিন ধরে লক্ষাধিক টাকা তছরুপ করার অভিযোগ উঠেছে শান্তিপুরের বাবলা পঞ্চায়েতের বহুমুখী সমবায় সংঘ বা ক্লাস্টারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে সমবায় অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান বোর্ড মেম্বার সহ সমবায় সমিতির মহিলা সদস্যদের একাংশ। ব্লক প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি এদিন সমবায়ের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন শান্তিপুরের বিডিও।


    শান্তিপুর ব্লকের বাবলা পঞ্চায়েতের বহুমুখী সংঘ সমবায়ের উপর ছোট বড় মিটিয়ে প্রায় ৪০০টি সমবায় গোষ্ঠী নির্ভরশীল। এই গোষ্ঠীগুলোর মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব বহুমুখী সংঘ সমবায়টির। গত বছরের মার্চ মাস নাগাদ ক্লাস্টারের বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তারপরেও প্রাক্তন বোর্ড মেম্বার ও পদাধিকারীদের দিয়েই চলছিল ক্লাস্টারের কাজ। বোর্ড মেম্বারদের একাংশের অভিযোগ, দিনের পর দিন ধরে সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করে আসছেন তিন পদাধিকারী। কোনও প্রকল্পের কাজ করার আগে প্রতিমাসে বোর্ডের ১২ জন মেম্বারকে নিয়ে রেজ্যুলেশন বৈঠকে বসার নিয়ম থাকলেও বৈঠক হয় না। বোর্ড মেম্বারদের না জানিয়ে যাবতীয় লেনদেনের কাজকর্ম করে চলেছেন ক্লাস্টারের সভানেত্রী মনিকা সাহা, সম্পাদিকা রীনা রায় ও কো-অর্ডিনেটর রূপা সরকার। এমনকী বোর্ড মেম্বারদের সই জাল করে স্কুল ইউনিফর্ম তৈরি, ধান ক্রয়, পথসাথী, খাদ্যছায়া প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় সরকারি কাজের টাকা ক্লাস্টারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।


    ব্লক প্রশাসন জানা গিয়েছে, গত ২৪ জুন শান্তিপুরের বিডিওর কাছে এই সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন ক্লাস্টারের অন্যান্য বোর্ড মেম্বাররা। তার ভিত্তিতে ব্লক প্রশাসনের তরফে সে সময়ে অন্তর্বর্তী তদন্তও হয়। সেখানেই বোর্ড মেম্বারদের সই জাল করে টাকা তছরুপ করার বিষয়টি সামনে আসে। তারপরেও সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় চলছে বলে অভিযোগ তুলে এদিন দুপুরে বাবলা পঞ্চায়েত চত্বরে থাকা ক্লাস্টারের অফিসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর জনা পঞ্চাশেক মহিলা সদস্য। ছুটে আসেন বোর্ড মেম্বার তথা জেলা পরিষদের নারী ও শিশু কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ বাসন্তী সরকার। তিনি বলেন, দিনের পর দিন ধরে সরকারি প্রকল্পের টাকার তছরূপ চলছে এখানে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমবায় গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য এত কিছু করছেন। অথচ এই দুর্নীতির জন্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিক্ষোভকারী বোর্ড মেম্বার সুচিত্রা বিশ্বাস বলেন, গতবছর গোটা ব্লকের সরকারি স্কুলগুলোর জন্য ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার এসেছিল। অথচ সেই কাজ গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যরা পাননি। স্থানীয় একটি এজেন্সিকে টাকার বিনিময়ে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র দুটো সেলাই মেশিন কিনে খরচ ১২ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে। সবটাই প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানিয়েছি।


    ক্লাস্টারের অফিসে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভের পর সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন বোর্ডের সদস্যরা। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বহুমুখী সমবায় সংঘ বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। দুর্নীতির বিষয়ে ক্লাসটারের কো-অর্ডিনেটর রুপা সরকারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বোর্ড মিটিংয়ে সর্বসম্মতভাবেই টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটা সমস্যা থাকার জন্য ব্যক্তিগতভাবে সেই টাকা তুলে কাজের জন্য খরচ করা হয়েছিল। সবটাই হিসেবে রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। শান্তিপুর ব্লকের বিডিও সন্দীপ ঘোষ বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। আপাতত ক্লাস্টারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে এলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)