কাঁথির তৃণমূল কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে তদন্ত-নির্দেশ নবান্নের
বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কাঁথি: অন্যের বহুমূল্য সম্পত্তি প্লট আকারে বিক্রির অভিযোগে তৃণমূল কাউন্সিলার ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দিল নবান্ন। কাঁথি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার অতনু গিরি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় এফআইআর হয়েছে। মঙ্গলবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী এনিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) বৈভব চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন। শেরপুর মৌজায় প্রায় ৭৭শতক জমি দু’কোটি টাকার বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই সম্পত্তির আসল মালিক এরজন্য কানাকড়ি পাননি। গোটা ঘটনায় জমির মালিক থানার পাশাপাশি রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতে নবান্ন থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলাশাসক বলেন, অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। অতিরিক্ত জেলাশাসককে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
২০১০সালে কাঁথি পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডে শেরপুর মৌজায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা দিয়ে ৭৭ শতক জমি কিনেছিলেন আশিস মাইতি। আশিসবাবুর বাড়ি দেশপ্রাণ ব্লকের আঁউরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের নামালডিহা গ্রামে। তিনি চিংড়ি মাছের ব্যবসা, মাছের খাবার ও বরফ কলের মালিক। ৮৫ জনের বেশি কর্মচারী তাঁর সংস্থায় কাজ করতেন। ওই জমি নেওয়ার পর কনভার্সন করার সময় আশিসবাবু জানতে পারেন, বহুমূল্য ওই জমিতে যাতায়াতের প্রবেশ পথ নেই। এরজন্য কনভার্সন আটকে যায়। ২০১১ সালে তাঁর বাবা মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। চিকিৎসায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। শেষ পর্যন্ত বাবার মৃত্যু হয়। মেয়ের শারীরিক সমস্যায় অনেক টাকা খরচ হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ওই জায়গা বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। স্থানীয় কাউন্সিলার সহযোগিতা করার নাম করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
২০২০ সালে বহুমূল্য ওই জমি বিক্রি করার জন্য আশিসবাবু কাউন্সিলার ঘনিষ্ঠ কাবুল বেরাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন। তাতে শর্ত ছিল, জমি বিক্রি করার পর আশিসবাবুকে টাকা দিতে হবে। তারপর অভিযুক্ত কাবুল তাঁর স্ত্রী এবং কাঁথি পুরসভার কর্মী দিলীপ কাণ্ডারকে ওই জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেন। দিলীপবাবু ওই জমি দেখিয়ে কাঁথি সুপার মার্কেট বাজার সমিতি থেকে ২৫ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে নেন। গোটাটাই একটা র্যাকেট। ওই র্যাকেট ৭৭ শতক জমি বিক্রি করে দিয়েছে। আশিসবাবু কানাকড়িও পাননি। এরপরই তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অতনু গিরি এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় এফআইআর করেন।
আশিসবাবু বলেন, আমি একজন অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী ছিলাম। কিন্তু, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে ঋণ হয়ে যায়। ওই জমিটি বিক্রি করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। অতনু গিরি ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা জমি বিক্রি করে দেওয়ার টোপ দিয়ে নানাভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দেউলিয়া করে দিয়েছেন। আমার জমি দু’কোটির টাকার বেশি মূল্যে প্লট করে বিক্রি করেছেন। আমি ইতিমধ্যে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছি। ওঁরা নানা জায়গায় ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের উপর আস্থা আছে। আশা করি আমি সুবিচার পাব।
অভিযুক্ত কাউন্সিলার অতনু গিরি বলেন, ঘটনাটি আমাদের ওয়ার্ডের। সেই সুবাদে আমি সালিশিতে ছিলাম। কিন্তু, এখানে আমার সরাসরি কোনও যোগ নেই। আশিস মাইতি আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলছেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।