পাড়ুইয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে বন্ধ বেসরকারি আবাসন নির্মাণ
বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বোলপুর: প্রশাসনের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে নির্মাণ কাজ চালানোর অভিযোগ উঠল পাড়ুই থানার বেসরকারি আবাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, চায়না পাঁচিল দিয়ে সীমানা ঘেরার কাজ করছিল বেসরকারি সংস্থাটি। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে গেলে মিস্ত্রিরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পালায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি, জমি-বিতর্কের তদন্ত শুরু করে প্রশাসন। এরপর ওই বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।। তারপরেও নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে। এই অভিযোগে এদিন জমিহারা কৃষকরা বোলপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিস ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই বেপরোয়াভাবে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রেক্ষিতে এদিন ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জমিহারা কৃষকরা সরব হন। পরে অবশ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। তবে, এই ঘটনায় পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে পুলিসের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। ফলে, জমি আন্দোলন নিয়ে পরিস্থিতি দিনভর উত্তপ্ত রইল কসবার সরপুকুরডাঙা এলাকায়। যদিও ওই বেসরকারি আবাসন বেসরকারি সংস্থা বিষয়টিকে সংগঠিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে।
পাড়ুই থানার কসবা গ্রামে অবস্থিত ওই আবাসন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের সমস্ত কটেজ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করলে স্থানীয় কৃষকরা তাঁদের জমি দখলের অভিযোগ তোলেন। কৃষকদের দাবি, তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সরকারের দেওয়া পাট্টা জমি দখল করেছে ওই আবাসন কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে জমিহারা কৃষকরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। এই ঘটনায় এডিএম(এলআর) অসীম পালের নেতৃত্বে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেন। সপ্তাহখানেক আগে সেই রিপোর্ট তাঁরা জেলাশাসককে দেন। তার ভিত্তিতে ওই জমি ‘ভেস্ট ল্যান্ড’ হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। এরপর সংশ্লিষ্ট আবাসন ও সংলগ্ন ১১. ৪১ একর জমি সরকারি খাতে নথিভুক্ত করে জেলা প্রশাসন। সেই জমি রেকর্ডের পর পাট্টা দিয়ে প্রকৃত জমিহারাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানায়। কিন্তু কৃষকরা সেই জমি এখনও ফিরে পাননি বলে অভিযোগ। তার প্রেক্ষিতে সোমবার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জমি ফেরত নিয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানান। এরপরই মঙ্গলবার সকালে আবাসন সংস্থার বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজ চালানোর অভিযোগ ওঠে। জমিহারা কৃষকরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে ধামসা, মাদল বাজিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। পরে, নবনিযুক্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সব্যসাচী ঘটককেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানান। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নির্মাণ কাজ বন্ধ করেন। তবে পুলিসের ভূমিকায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এই মর্মে এদিন পুলিসকে ঘিরেও জমিহারারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে শুভ নাথ, শ্যামলাল হাঁসদা, রাম সোরেনের অভিযোগ, পুলিস নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলেই বেসরকারি সংস্থার এত বাড়বাড়ন্ত। উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। যদিও আবাসনের কর্ণধার বলেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। সেখানে কোনও নির্মাণ কাজ হয়নি। আমরা সংগঠিত ষড়যন্ত্রের শিকার।