সংবাদদাতা, মালদহ: প্রহসন! প্রতি বছর ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চলেছে হাজার হাজার পরিবার। অথচ নদী ভাঙনের মতো জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় বাজেটে কার্যত কোনও বরাদ্দ নেই। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছে মালদহ।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে ভাঙন পীড়িত মানুষ কেন্দ্রের এই বঞ্চনা নিয়ে ক্ষুব্ধ। এমনকী মালদহ থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ, বিধায়কদের আর্জিতেও জেলার ভয়াবহ ভাঙন নিয়ে কার্যত সাহায্যের হাত বাড়াল না কেন্দ্র। এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মালদহের ভাঙন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় বাজেটে যে চরম উদাসীনতার ছাপ, তা ঢাকতে অবশ্য তৎপর হয়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
মালদহের ১৫টি ব্লকের প্রায় অর্ধেক নদী ভাঙনের শিকার। একই অবস্থা মালদহ দক্ষিণ লোকসভার অন্তর্গত মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা, সামসেরগঞ্জ ব্লকে। কয়েক লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন গাছের তলায় বা বাঁধে। ভাঙন প্রতিরোধে সক্রিয় হতে কেন্দ্রের অধীন ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্পের কাছে বারবার আর্জি জানিয়েও ফল মেলেনি।
জেলার গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ অ্যাকশন নাগরিক কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের বাড়িঘর, পরিবার, সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। তারপরও বাজেটে ভাঙন রোধে আশার আলো নেই। আমরা হতাশ।
কয়েকদিন আগে নদী ভাঙন রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। ১০ জুলাই মালদহ ও মুর্শিদাবাদের নদী ভাঙন রুখতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের লিখিত দাবি জানান ইংলিশবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। কিন্তু বাজেটে নিজেদের দলের জনপ্রতিনিধিদের দাবি কার্যত উপেক্ষাই করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর কথায়, ঝাউবোনা, উত্তর ও দক্ষিণ হুকুমতটোলা, জঞ্জালিটোলা, মালতিপুর, বীরনগর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের জমি চলে গিয়েছে নদীতে। বহু মানুষ ভাঙনে সব হারিয়ে কার্যত নরকযন্ত্রণা ভোগ করছেন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে রাজ্য সরকার তাঁদের পাট্টা, বিদ্যুৎ দিয়ে যথাসম্ভব সুরাহার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভাঙন অব্যাহত। কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাক। বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের আবেদনও উপেক্ষিত। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এবার আন্দোলন হবে। তবে, বরাদ্দ না হওয়ার সব দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন খগেন মুর্মু। তিনি বলেন, কেন্দ্র নয়, রাজ্য সরকার উদাসীন। তারা সঠিক পরিকল্পনা পেশ করতে পারেনি কেন্দ্রের কাছে। তাই বরাদ্দ হয়নি। মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ ঈশা খান চৌধুরীর বক্তব্য, আমরা সংসদে লাগাতার ভাঙন নিয়ে সরব হয়েছি। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ভাঙন রোধে আন্তরিক ছিল। কিন্তু বিজেপি সরকার মালদহের ভয়াবহ ভাঙনকে কতটা উপেক্ষা করছে, এদিনের বাজেটে তা স্পষ্ট। মালদহ দক্ষিণ জেলা বিজেপি সভাপতি পার্থসারথি ঘোষের মন্তব্য, নদী ভাঙন বড় সমস্যা। এর স্থায়ী সমাধানে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে কেন্দ্র। কিন্তু আগে রাজ্য হয় ভাঙন প্রতিরোধের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা পেশ করুক। না হলে ভাঙন রোধের কাজ কেন্দ্রের হাতে ছেড়ে দিক।