সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: পদ্মের ঘাঁটি উত্তরবঙ্গ। এখানে তাদের এমপি ছ’জন। বিধায়কও সংখ্যায় বেশি। অথচ এই তল্লাটের জন্য বাজেটে প্রাপ্তি ‘শূন্য’। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেরবার পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের চা শিল্প নিয়েও কোনও ঘোষণা নেই। এতে বণিক মহল থেকে রাজনৈতিক নেতা, চা বাগান মালিক থেকে শ্রমিক মহল্লা সকলেই হতাশ। তাদের বক্তব্য, ভাঁওতা দিয়ে ভোট নিলেও চা বাগান ও শ্রমিকদের নিয়ে আপাতত ভাবছেই না বিজেপি শাসিত দিল্লির সরকার।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে আটটি আসনের মধ্যে ছ’টিই দখলে রেখেছে গেরুয়া শিবির। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের পর এবার এখানে তাদের একটি আসন হাতছাড়া হয়েছে। তা হলেও দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় এখানে তাদের ফল কিছুটা ভালো। এজন্যই মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ নিয়ে অতি আগ্রহে টিভিতে নজর রাখেন আমআদমি। যারমধ্যে চা বাগান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অন্যতম। কিন্তু, বাজেটে চা শিল্পের জন্য কোনও ঘোষণা না থাকায় তাঁরা তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম শিল্প চা। পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে বড় বাগানের সংখ্যা প্রায় ২৭৬টি। এর বাইরে ছোট চা বাগানের সংখ্যা অসংখ্য। ছোট ও বড় বাগানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমিক। তরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহেন্দ্র বনসাল বলেন, প্রতিটি চা বাগানই অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে। এজন্য ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ বাড়ানো, সুদের হার কমানো, ভর্তুকি প্রদান, ঘরোয়া ও আন্তজার্তিক বাজারে চা সংক্রান্ত প্রচার নিয়ে কোনও ঘোষণা নেই। এই বাজেট সেই প্রত্যাশা পূরণ করল না।
শ্রমিক সংগঠনগুলিও এই বাজেটের সমালোচনা করেছে। আইএনটিটিইউসি’র দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) নির্জল দে বলেন, পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের চা বাগানে ভাঁওতা দিয়ে ভোট লুট করেছে বিজেপি। চা বাগান ও শ্রমিকদের নিয়ে ওরা ভাবে না। তাই বাজেটে শ্রমিকদের বকেয়া পিএফ দেওয়া, বাগান অধিগ্রহণ, হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রদান সহ কোনও কিছুরই উল্লেখ নেই।
কেন্দ্রের এই বাজেট নিয়ে বণিক সংগঠনগুলিও হতাশ। উত্তরবঙ্গ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সঞ্জয় টিব্রেওয়াল বলেন, কেন্দ্রীয় বাজেটে চা বাগান নিয়ে কোনও দিশা নেই। পর্যটন শিল্প, স্বাস্থ্য, ইকনমিক জোন তৈরি সহ কোনও খাতেই কিছু নেই। প্রাপ্তি শূন্য। আমরা হতাশ। সিআইআই (উত্তরবঙ্গ) চেয়ারম্যান নরেন্দ্র গর্গ বলেন, বাজেটে উত্তরবঙ্গের জন্য ঘোষণা থাকলে খুশি হতাম।
অন্যদিকে, তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী (সমতল) পাপিয়া ঘোষ বলেন, এটা কেন্দ্রের জনবিরোধী বাজেট। শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গকে সবদিক থেকে বঞ্চিত করা হল। যদিও দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, এই বাজেটে মহিলা ও যুবকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন তহবিল ও স্কিম ঘোষণা করেছে। এই বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিক্ষেত্রে আধুনীকরণ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, যুবকদের দক্ষ করে তোলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।