নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও কোচবিহার: প্রকৃতির ক্যানভাসে মোড়া ডুয়ার্সে এবার নয়া দশ ডেস্টিনেশন। এই নতুন গন্তব্যকে সামনে রেখেই পুজোয় লক্ষ্মীলাভের আশায় ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। নয়া ডেস্টিনেশনগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার ট্রেকিং, তেমনই মিটবে ‘ডে আউট’-এ ভুটানের মাটিতে পা রেখে বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ডুয়ার্সের হোটেল, রিসর্ট ও হোম স্টেতে ৫০ শতাংশ বুকিং ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে স্পেশাল ট্রেন দিলে বাকি বুকিংটাও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তবে শুধু পুজোর সময় নয়, বছর শেষে ছুটির মরশুমে ডুয়ার্সে পর্যটকদের ঢল নামার আশায় ডিসেম্বরে লাটাগুড়িতে আয়োজন করা হচ্ছে এশিয়ান লোক উৎসব। তাতে ডুয়ার্সের পাশাপাশি যোগ দেবে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ।
ডুয়ার্সজুড়ে ছডিয়ে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর নানা গ্রাম। সেসব জায়গা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পর্যটনকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকরা চাইলে ঘুরে দেখতে পারবেন ডামডিমের বৌদ্ধ গুম্ফা। ওদলাবাড়ি থেকে কাছেই কালিম্পং জেলার ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম টুহুং। যেখানে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। গজলডোবার কাছে জঙ্গল লাগোয়া ভ্রামরিদেবীর মন্দির। পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারেন সেটি। বাগরাকোট থেকে ইয়েলবং যাওয়ার নতুন রাস্তা হয়েছে। যাঁরা ট্রেকিং পছন্দ করেন, তাঁরা সকালে বেরিয়ে সেখানে ট্রেকিং সেরে ফিরে আসতে পারবেন সন্ধ্যায়। ডুয়ার্সে আসা পর্যটকদের জন্য নয়া ডেস্টিনেশন হিসেবে রাখা হচ্ছে ভুটানের সামচি। চামুর্চি দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় সামচি। সেখানে রয়েছে বৌদ্ধ গুম্ফা, শিবমন্দির। সুন্দর একটি মার্কেট। পছন্দমতো কেনাকাটা করতে পারেন পর্যটকরা। আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডায়না নদীর সৌন্দর্য তো অপরূপ।
চালসা ও গোরুমারার জঙ্গলে ঢোকার ঠিক মাঝখানে আরও একটি ঘন জঙ্গল। পাশেই বড়দিঘি চা বাগান। বাগানের মাঝে ব্রিটিশ আমলের বাংলো। রোমাঞ্চকর এই পরিবেশে রাত্রিবাস করতে পারেন পর্যটকরা। পাশেই টিলাবাড়ি। সেখানে রয়েছে সরকারি কটেজ। রেস্তরাঁ, পানশালা, সময় কাটানোর দারুণ জায়গা। পর্যটকদের জন্য অপেক্ষায় পশ্চিম ডামডিম। আলাপচাঁদ ও তারঘেরা জঙ্গল লাগোয়া এই জায়গাটিকে ভালো না বেসে উপায় নেই। মাল পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে থাকার জায়গা। বন্যপ্রাণী দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ার। আবার মালবাজার ও চালসার মাঝে সাথকিয়া। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নেওড়া ও সাথকিয়া নদী। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় মেটেলির ছোট ছোট পাহাড়। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। নদী ও চা বাগান ঘেরা ইনডং। এই চা বাগানে পা রাখলেই মনে পড়ে যাবে ‘চামেলি মেমসাহেব’-এর কথা। যদিও ওই ছবির শ্যুটিং হয়েছিল অসমে। কিন্তু তা যেন হুবহু মিলে যায় ইনডংয়ের দৃশ্যপটে। চালসা লাগোয়া মঙ্গলবাড়িতেও তৈরি হয়েছে কটেজ।
লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘গতবার সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে শেষ মুহূর্তে পুজোর বুকিং বাতিল করেছিলেন পর্যটকরা। এর প্রভাব পড়েছিল ডুয়ার্সের পর্যটনেও। এবার গরমেও ডুয়ার্স ফাঁকা ছিল। কিন্তু আমরা পুজোর বুকিংয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ বুকিং হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে আসার স্পেশাল ট্রেন দিলে বুকিং বাড়বে। পর্যটকরা ডুয়ার্সে নতুন ডেস্টিনেশনের খোঁজ করছেন। আমরা সেইমতোই প্যাকেজ সাজাচ্ছি।’