সংবাদদাতা, মেখলিগঞ্জ: চলতি বর্ষায় মাছ ধরার ছিপ তৈরিতে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যাধপাড়ার বাসিন্দারা। হাতে তৈরি নলবাঁশের এই ছিপ বছরভর কমবেশি বিক্রি হলেও ভরা বর্ষায় চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেজন্য বর্তমানে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যাধপাড়ায় ব্যস্ততা চরমে উঠেছে। এই সময় ছিপ বানিয়ে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই সারা বছরের অন্নের সংস্থান হয় তাঁদের।
বাংলার একটি লুপ্তপ্রায় জনজাতি হল এই ব্যাধ সম্প্রদায়। একসময় তাঁরা দল বেঁধে বনের পশুপাখি শিকার করতেন। সেসময়ে সেটাই ছিল তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র জিয়নকাঠি। ধীরে ধীরে তাঁদের অভ্যাস পাল্টে গিয়েছে। এখন আর তাঁদের বনের পশুপাখি বধ করতে হয় না। আদিম পেশা শিকার ছেড়ে অন্য পেশার দিকে এখন ঝুঁকে পড়েছেন তাঁরা। সারা বছর ধরে মাছ ধরার ছিপ তৈরি করাই এখন আদিবাসী ব্যাধদের মূল পেশা। উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ৭০টি এরকম পরিবারের বসতি রয়েছে। ব্যাধপাড়া নামে পরিচিত ওই এলাকায় ঘরে ঘরে ছিপ তৈরি করাই এখন আদিবাসী ব্যাধদের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন।
সংসারের অভাব ঘোচাতে ধুলিয়া উছলপুকুরি অর্থাৎ ব্যাধপাড়ার বাসিন্দারা ছিপ তৈরির পেশাকে বেছে নিয়েছেন অনেকদিন আগে থেকেই। এলাকার এমন কোনও বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ছিপ বানানো হয় না। ছিপ তৈরির কাজ করে গত কয়েক বছরে এলাকার ছবিটা গ্রামবাসীরা নিজেরাই পাল্টে দিয়েছেন। ছিপ বিক্রি করে উপার্জনের টাকাতেই তাঁদের এখন সংসার চলে।
উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গায়েত্রী বর্মন বলেন, ব্যাধপাড়ার মধ্যে অধিকাংশ পরিবারেরই এখন মূল পেশা ছিপ তৈরি। বর্ষার আগে থেকে শুরু করে দুর্গোপুজো পর্যন্ত ব্যাধপাড়ায় দেখা যায় ছিপ তৈরির ব্যস্ততা। এখানকার বাসিন্দা নীরেন ব্যাধ, ধীরেন ব্যাধ, মনোরঞ্জন ব্যাধের কথায়, পাইকাররা বাইরে থেকে এসে ছিপ কিনে নিয়ে যান। ব্যাধপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা মানিক ব্যাধ বলেন, প্রতিবছর বর্ষার সময় মাছ বেশি হয় বলে এই সময়ে হাতে তৈরি ছিপের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। পঞ্চা ব্যাধ, নিরঞ্জন ব্যাধ প্রমুখ জানিয়েছেন, তাঁদের বানানো ছিপ বর্ধমান, বারাসত, রানাঘাটের মতো জায়গা থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যান। পাইকারদের হাত দিয়ে ছিপ পাড়ি দেয় অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে। প্রহ্লাদ ব্যাধ, জগবন্ধু ব্যাধ, বাহাদুর ব্যাধ বলেন, আদিম পেশা ছেড়ে ব্যাধরা এখন কেউ কৃষিকাজ, কেউ বা ছিপ তৈরির কাজে ঝুঁকেছেন। কেউবা ব্যবসা, চাকরি করেও কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
মেখলিগঞ্জের বিডিও অরিন্দম মণ্ডল বলেন, নিজেদের চেষ্টায় ওঁরা উপার্জন করছেন শুনে ভালো লাগছে। সরকারিভাবে কিছু করা যায় কি না দেখব।