সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর ও নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কর্মবিরতিতে অনড় আলু ব্যবসায়ীদের সংগঠন। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জয়পুরে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সরকার আলোচনায় না ডাকলে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া হবে। যদিও কোনও আগাম চিঠি ছাড়াই আচমকা আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এদিন নবান্ন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আগে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে হবে, তারপর বৈঠক। রাজ্য সরকারের কঠোর মনোভাব টের পেয়ে আজ, বুধবার ফের বৈঠকে বসবেন সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে ঠিক হবে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাবে, নাকি ধর্মঘট তুলে নিয়ে সমঝোতার বার্তা দেবে।
মঙ্গলবার বিধানসভা ভবনে মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর আলুর পরিস্থিতি নিয়ে কড়া নজরদারি ও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পাল্টা সংগঠন তৈরি নিয়েও শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। আলু নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে আলুর বন্ড চাষিদের কাছ থেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। প্রসঙ্গত, খোলা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে তা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আলু ব্যবসায়ীরা। এর ফলে সমিতি দুর্বল হবে বলে বৈঠকে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, সরকারের লিখিত নির্দেশ না থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন বর্ডারে আলুবোঝাই গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেজন্য আমরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। ইতিমধ্যে বিভাগীয় মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ফোন করে আন্দোলন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সংগঠনের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ফের আলোচনার জন্য বুধবার আরামবাগে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করছি, এক-দু’দিনের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের হবে।
আলু নিয়ে ফাটকাবাজি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী টাস্ক ফোর্সকে বাজারে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেও কিছু ব্যবসায়ী বেশি লাভের জন্য ব্যাপকহারে ভিনরাজ্যে আলু পাঠিয়েছেন। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও কোচবিহার জেলার হিমঘর থেকে বের হওয়া আলুর বেশিরভাগ ভিনরাজ্যে গিয়েছে। তাতে আলুর দাম আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিস প্রশাসন রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে চেকিং বাড়িয়ে দেয়। আর তাতেই ব্যবসায়ীদের ‘আঁতে ঘা’ লেগেছে। গত শনিবার জয়পুরে বৈঠক করে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয়। সোম ও মঙ্গলবার সিঙ্গুর ছাড়া অন্য কোথাও হিমঘর থেকে আলু বের হয়নি। এদিন আলু ব্যবসায়ীদের বৈঠকে অধিকাংশ প্রতিনিধি ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। আন্দোলনের সুর বেঁধে দেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিনিধিরা। সেই সুরেই সুর মেলান বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান সহ অন্য জেলার প্রতিনিধিরা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপে কিছুটা চাপে আলু ব্যবসায়ীদের সংগঠন। সমাধান সূত্র খুঁজতে তাই ফের আজ বৈঠকে বসছেন ব্যবসায়ীরা।