• কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে গণিত গবেষণায় বাঙালিরই দাপট, রাজ্যে স্নাতকে ভর্তিতে হতাশার ছবি
    বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: এরাজ্যে মৌলিক বিজ্ঞানের শাখাগুলিতে স্নাতক স্তরে ছাত্রভর্তি ক্রমশ কমছে। আর সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ম্যাথামেটিক্স বা গণিতশাস্ত্র। এবছরও কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ম্যাথস অনার্সে (বর্তমানে যা মেজর) ভর্তির হার একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। তবে, দিকপাল গণিতজ্ঞরা বলছেন, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পিএইচডি বা উচ্চতর গবেষণা স্তরে বাংলার ছেলেমেয়েদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। গণিত নিয়ে এই অঙ্কটা কেন মিলছে না, তা দেখে নেওয়া যাক।


    ছাত্র সংখ্যার নিরিখে পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় কলেজ হল শিয়ালদহের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (মেইন)। প্রায় ৭০টি আসন রয়েছে এখানে। অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কমবেশি ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৩০-৩৫ হয়ে যাবে। গতবারের তুলনায় হিসেবটা অবশ্য ভালো।’ 


    গণিত নিয়ে পড়াশোনায় ছাত্রছাত্রীদের এই অনীহা কেন? এই ব্যাপারে ইন্দ্রনীলবাবু অবশ্য স্কুল স্তরে অবৈজ্ঞানিকভাবে আঁক কষানোর কারণকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘অঙ্ক ভয়ের নয়, ভালোবাসার জিনিস। তবে, প্রাইভেট টিউশনের প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক চটজলদি টোটকায় সর্বনাশ হচ্ছে। এখন কেউই ভালোভাবে পড়াতে এবং পড়তে চায় না। সেই কারণেই এই অবস্থা।’ দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গীও গণিত নিয়ে বেশ হতাশ। তিনি বলেন, ‘রসায়নে বেশ সাড়া রয়েছে। তবে, গণিতে ভর্তি একেবারেই কম।’


    বর্তমানে মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে (টিআইএফআর) অধ্যাপনায় নিযুক্ত, গণিতে শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর এবং ইনফোসিস পুরস্কারজয়ী স্বামী বিদ্যানাথানন্দ তথা মহান মহারাজ একটি আশাব্যঞ্জক তথ্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় আট-নয় বছর মুম্বইয়ে থাকায় বাংলার বাস্তব পরিস্থিতি জানি না। তবে, এখানে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে দেখেছি গণিতে পিএইচডির ৫০ শতাংশই বাংলার ছেলেমেয়ে।’ টিআইএফআর মুম্বই এবং তার অধীন আইসিটিএস বেঙ্গালুরুর অধ্যাপকদের উদ্যোগে বেঙ্গালুরু এবং কলকাতায় একটি ম্যাথস স্টাডি সার্কেল চালু হয়েছে কোভিডের ঠিক আগে। সেখানেও উৎসাহীদের নিয়ে চলছে গণিতচর্চা।


    ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ভুবনেশ্বরে যেমন ইনস্টিটিউট অব ম্যাথামেটিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনস, চেন্নাইয়ে ইনস্টিটিউট অব ম্যাথামেটিক্যাল সায়েন্স, চেন্নাই ম্যাথামেটিক্যাল ইনস্টিটিউট রয়েছে, এরাজ্যে তেমন প্রতিষ্ঠান বাড়ানো দরকার। কারণ, গণিতের শীর্ষক্ষেত্রে বাঙালির মেধা রয়েছে। তবে, তাঁদের বড় অংশ ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যত বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এরাজ্যেই গণিত নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন, স্নাতক স্তরে তত বেশি পড়ুয়া উৎসাহী হবেন। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি ম্যাথস অলিম্পিয়াডের জন্যও উৎসাহ দিয়ে থাকে। 


    প্রসঙ্গত, এরাজ্যে জেবিএনএসটিএস প্রতিষ্ঠানটি রাজ্য স্তরে সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। তাতে গণিত থাকলেও পৃথক ম্যাথস অলিম্পিয়াডের আয়োজন হয় না। প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা মৈত্রী ভট্টাচার্য বলেন, ‘সায়েন্স অলিম্পিয়াডের সুফল আগামী বছরগুলিতে মিলবে, এই ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। গণিত নিয়ে পড়ার পরে নানা পেশার সুযোগ রয়েছে। তার মধ্যে বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো লোভনীয় পেশাও উল্লেখ্য।’


    দীর্ঘদিন ধরে স্কুল এবং কলেজপড়ুয়াদের সহজে গণিত শেখা, তাতে আগ্রহ বাড়ানোর কাজ করছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপসচিব পার্থ কর্মকার। তিনি বলেন, গণিত বিষয়টি হল রান্নার নুনের মতো। গবেষণা বা শিক্ষকতা তো আছেই, তার সঙ্গে ডেটা সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট, স্ট্যাটিসটিক্সের মতো ক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সবাইকেই গণিত শিখে রাখতে হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)