সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: বিদেশি ব্যান্ডের গানে বুঁদ হয়ে থাকত ওরা। ক্লাসে তা নিয়ে আলোচনাও চলত। কিন্তু তার পরিণতি এত ভয়ঙ্কর হবে তা কে ভেবেছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিটিএস ব্যান্ডের টানে ১৩ জুন ঘর ছেড়েছিল ক্লাস সিক্সের দুই কিশোরী। পুলিসের তৎপরতায় তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সোমবার ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা। উদ্ধার হল এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ। ঘটনাটি উলুবেড়িয়ার। সোমবার বিকেলে নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় বছর বারোর এই ছাত্রী। মৃত ছাত্রীর মা-বাবা দু’জনেই শিক্ষক। উলুবেড়িয়া থানার পুলিস একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যদিও এই ঘটনাকে ঘিরে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। মৃতার কাকার অভিযোগ, অপর কিশোরীর পরিবারের ব্যবহারও এই ঘটনার পিছনে দায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিটিএস ব্যান্ডের ভক্ত ছিল দু’জনেই। দক্ষিণ কোরিয়ার এই ব্যান্ডে অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা নানা ধরনের নাচ-গাচ করে। মাসখানেক আগে এই ব্যান্ডে আসক্ত হয়ে উলুবেড়িয়ার দুই নাবালিকা তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। দুই নাবালিকার পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরে কলকাতার বেলেঘাটা থানা তাদের আটক করে। পুলিস দু’জনকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়। সূত্রের খবর, এরপর দুই পরিবারের লোকজনই নাবালিকাদের কাউন্সেলিং শুরু করে। কিছুদিন দু’জনের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়। এমনকী স্কুলেও তাদের আলাদা ঘরে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।
দুই কিশোরীকে দেখা করতেও দেওয়া হতো না। আত্মঘাতী কিশোরী দিন দুয়েক আগে বান্ধবীর কাছে থাকা একটি খাতা চেয়ে পাঠায়। তা নিয়ে কিশোরীর বাবা তাকে সতর্ক করে। ওই বান্ধবীর পরিবারও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার বিকেলে বাবার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে আত্মঘাতী হয় কিশোরী। বাবার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে নাবালিকাকে ঝুলতে দেখেন। উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ঘটনার পরই মৃত নাবালিকার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিসের এক কর্তা জানান, মোবাইলে আসক্তি কাটাতে স্কুলে গিয়ে নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হয়। তবে এই ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত। পুলিসের পক্ষ থেকে আরও বেশি করে সচেতনতা শিবির করা হবে।