• ভেঙেছে কংক্রিটের বাঁধ, সমুদ্র গর্জন ভয় দেখাচ্ছে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরের গ্রামবাসীদের কাছে এখন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের গর্জনে ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর। জোয়ার এলেই শুরু হয় ছোটাছুটি। বাড়ি ছেড়ে সবাই গিয়ে আশ্রয় নেন গ্রামের উঁচু রাস্তায়। এভাবেই গত তিনদিন ধরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিন ও রাত এক করে ফেলেছেন গ্রামবাসীরা। 

    এই বিষয়ে গোবর্ধনপুরের বাসিন্দা সুমিত্রা দাস বলেন, ‘এই গ্রামের দক্ষিণ অংশে প্রায় ১২০০ মিটার কংক্রিটের একটি বাঁধ ভেঙে গিয়ে জমির সঙ্গে সমান্তরাল হয়ে গিয়েছে। এখন জোয়ার এলেই নিমেষের মধ্যে বাড়ির উঠোন পর্যন্ত সমুদ্রের জল ঢুকছে। বঙ্গোপসাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাড়ির উঠোনে। তাই জোয়ার আসার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পরিবারের সবাই মিলে উঁচু রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ভাটার টান ধরলে আবার সবাই বাড়িতে ফিরে আসি। রান্না করার মতো কোনও জায়গা নেই। টিন দিয়ে ঘিরে ইট দিয়ে কোনোরকমের দু’মুঠো চাল ফুটিয়ে নিই। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয় না। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী দিনে কীভাবে বেঁচে থাকব তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি। পরের কটালে সমুদ্রের জল আরও বাড়লে এই এলাকায় ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এখন শুধু বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকিয়েই গ্রামবাসীদের দিন কেটে যায়। কেবলই জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক।’

    পূর্ণিমার কটালে কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, পাথরপ্রতিমা ও নামখানার বিস্তীর্ণ এলাকায় নদী ও সমুদ্রের বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরের দক্ষিণ অংশে প্রায় ১২০০ মিটার সমুদ্রের কংক্রিটের বাঁধ ভেঙে গিয়ে নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রায় ১০০টি পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নামখানার মৌসুনি দ্বীপের বালিয়াড়াতে বড়তলা নদীর প্রায় ৮০০ মিটার বাঁধ ভেঙে এলাকায় নোনা জল ঢুকেছে। নারায়ণপুরের নাদাভাঙায় প্রায় ১০০ মিটার নদীবাঁধে ধস নেমেছে। তবে এই এলাকায় এখনও নোনা জল ঢোকেনি। প্রশাসনের নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে এই এলাকায় নদীবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের সামনের সমুদ্র সৈকতে ভাঙন এখনও অব্যাহত। প্রতিদিনই এখানে অল্প অল্প করে ভাঙছে। গঙ্গাসাগরের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নিমাই মহারাজ বলেন, ‘কপিলমুনি মন্দিরের সামনের সমুদ্র সৈকত অস্বাভাবিকভাবে ভাঙছে। এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর সমুদ্র সৈকতের সংযোগকারী কংক্রিটের রাস্তাটি পুরোপুরি ভেঙে গিয়ে সমুদ্র আরও তিন মিটার ভেতরে ঢুকে এসেছে। প্রাথমিকভাবে ওই অংশে ভাঙন রোধ করার জন্য বড় বড় বোল্ডার ফেলতে হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)