পাঁচ দিন সমুদ্রে ভেসে থাকা রবীন্দ্রনাথ বলছেন, 'যদি ওরাও ফিরে আসতো…'
এই সময় | ২৪ জুলাই ২০২৪
উসকো খুসকো চুল। ঠোঁটের উপরের অংশ নীল। হাতে ধরা একটা কাপ। বছর ৩২-এর যুবকের দৃষ্টিতে হাজার প্রশ্ন!
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মোবাইল স্ক্রিনে বিভিন্ন সোশাল সাইটে দেখা গিয়েছে একটি পোস্ট। ‘পাঁচ দিন সমুদ্রে ভেসেও প্রাণে বেঁচেছিলেন কাকদ্বীপের রবীন্দ্রনাথ দাস।’ জলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে বাংলাদেশের একটি জাহাজ তাঁকে উদ্ধার করে। এই পোস্ট সাম্প্রতিক বলে দাবি করা হলেও আদতে ঘটনাটি ২০১৯ সালের। দুঃস্বপ্নের পাঁচ বছর, এখন কেমন আছেন সেই রবীন্দ্রনাথ? খোঁজ নিল এই সময় ডিজিটাল।কাকদ্বীপের রবীন্দ্রনাথ পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী। রুটি রুজির টানে তিনি সমুদ্রে যেতেন। ২০১৯ সালে ৯ জুলাই বেশ কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎই রুদ্ররূপ নেয় প্রকৃতি, উত্তাল হয় সমুদ্র। ট্রলার উল্টে ঘটে বিপত্তি, অনেকেই তলিয়ে যান। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ জলে ভেসে ছিলেন। পেশায় মৎস্যজীবী এই যুবক সাঁতার জানতেন। খোলা আকাশের নীচে তিনি ভেসে ছিলেন প্রায় পাঁচ দিন। সেই সময়ে তাঁর পেটে পড়েছে শুধু বৃষ্টির জল। পাঁচ দিন সমুদ্রে ভেসে থাকার পর বাংলাদেশের এক জাহাজ তাঁকে উদ্ধার করে।
আর রবীন্দ্রনাথের জীবনযুদ্ধে জয়ের খবর নিয়েই কৌতুহলী নেটপাড়া। এখন কেমন আছেন তিনি? এই সময় -কে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘এখন আমি জল এড়িয়েই চলি। জাল বাঁধি। প্রয়োজনে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কেরালাতে যাই কাজের জন্য। কিন্তু, খুব ঠেকায় না পড়লে আর কোনওদিন সমুদ্রে যাব না।’ নিজের প্রাণ বাঁচলেও পাঁচ বছর আগে ট্রলারে থাকা তাঁর অন্যান্য সঙ্গীরা আজও নিখোঁজ। ভারাক্রান্ত গলায় রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে সেই দিন যাত্রা শুরু করেছিলাম তাঁরা আজও নিখোঁজ। যদি কোনও জাদু হয়…! ওরা ফিরে আসে!’ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে পড়ে রবীন্দ্রনাথের।
পাঁচ বছর আগের ভয়াবহ সেই স্মৃতিতে ডুব দিয়ে তিক্ত স্মৃতির কথা জানালেন রবীন্দ্রনাথ। বললেন, 'পাঁচ দিন প্রায় ভেসেছিলাম। ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে পৌঁছে যাই। সেই সময় বাংলাদেশের এক জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাকে দূর থেকে দেখতে পান। আমার দিকে তিনি যখন লাইফ জ্যাকেট ছুড়েছিলেন সেই সময় মনে হয়েছিল জীবন বাঁচাতে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং ভগবান।'
তবে প্রথমবার মুঠোয় করে সেই জ্যাকেট ধরতে পারেননি তিনি। শক্তিহীন দুর্বল শরীরটা ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু, বাংলাদেশের ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন হাল ছাড়েননি। তিনি তাঁর দিকে জাহাজ ঘোরান। ফের একবার লাইফ জ্যাকেট ছোড়েন তিনি। এবার আর 'মিস' হয়নি, জীবন জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে ফিরে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এরপর বাংলাদেশেই প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় হাইকমিশনের হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন তিনি।
নিজে পরিবারের কাছে ফিরলেও ট্রলারের সঙ্গীরা আজও নিখোঁজ। তাঁর ফিরে আসার লড়াই সোশাল দেওয়ালের ‘হট টপিক’। যদিও নেটপাড়ার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দূরত্ব শত যোজন। তিনি বলেন, ‘একটাই ব্যথা পাঁচ বছর বুকে চেপে নিয়ে ঘুরছি, যদি ওরাও ফিরে আসত…।’