এই সময়, শিলিগুড়ি: কেন্দ্রীয় বাজেটে সিকিম বরাদ্দ পেলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত কালিম্পংয়ের ভাগ্যে এক পয়সা জোটেনি। প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। আগামী শীতকালীন অধিবেশনের সময়ে দিল্লিতে ধর্নায় বসবেন দলের কর্মীরা।প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা এস পি শর্মা বলেন, ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বার বার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হচ্ছে বিজেপি। কিন্তু পাহাড়ের জন্য কিছুই করেনি। বর্ষাকালীন অধিবেশন পর্যন্ত আমরা সময় দিচ্ছি। শীতকালীন অধিবেশনে দিল্লিতে ধর্নায় বসা হবে।’
গত অক্টোবরে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সিকিমের পাশাপাশি বিধ্বস্ত হয় কালিম্পং জেলার তিস্তাবাজার, মেল্লি ও রংপো। তখনই কেন্দ্রীয় সরকার সিকিমকে অর্থ বরাদ্দ করে। কিন্তু বাংলার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এ বার বর্ষায় তিস্তা নদীর সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে তৈরি ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আদৌ এই সড়কে আর কখনও যান চলাচল সম্ভব হবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সময়ে বাজেটে তিস্তায় ক্ষতিগ্রস্ত কালিম্পংয়ের জন্য একটি পয়সাও বরাদ্দ না-হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা পাহাড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাহাড়ের মানুষ। গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিব্রত বিজেপিও।
দলের পাহাড় কমিটির সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান বলেন, ‘বাজেট ভালো করে খতিয়ে দেখার পরেই মন্তব্য করব।’ শুধু কালিম্পং নয়, তৃতীয় এনডিএ সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে হতাশ উত্তরবঙ্গের চা শিল্প। উত্তরবঙ্গের পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের চা বাগান গুলির শ্রমিকদের উন্নয়নের প্রশ্নে গত চার বছর আগে এক হাজার কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
তারপর তিস্তা-তোর্সা দিয়ে গড়িয়েছে বহু জল। অভিযোগ এক হাজার কোটি টাকা তো দূর অস্ত, চা শ্রমিকদের উন্নয়নে একটি টাকাও খরচ করা হয়নি। টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘বাজেটে কোনও ভালো খবর নেই। চা শিল্প রীতিমতো সংকটে। এই পরিস্থিতিতে চায়ের বাজারকে চাঙ্গা করার কোন দিশাও দেখতে পাচ্ছি না।’
টিপার সভাপতি মহেন্দ্র বনসল বলেন,‘আমরা হতাশ। চা বাগান মালিকদের যে বকেয়া রয়েছে তা থেকেই গেল। আমরা কোন প্রাপ্তি দেখতে পাচ্ছি না।’ বাগান মালিকদের মতোই চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল সোনার।
তিনি বলেন, ‘রেলের পর চা শিল্প ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। যেখানে এখনও সবচেয়ে বেশি চাকরি করেন মানুষ। শ্রমিকরাও হতাশ। ২০২১ সালেই বর্তমান অর্থমন্ত্রী উত্তরভারতের চায়ের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করেন। সেই টাকাই এখনো আসেনি। ভারত সরকারের ৪টি চা বাগান জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন বেতন, পিএফ পাননা চা শ্রমিকরা।’
উত্তরবঙ্গের মতো হতাশ দক্ষিণবঙ্গও। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য অর্থবরাদ্দ না হওয়ায় দুই মেদিনীপুরের বানভাসি এলাকার মানুষ হতাশ। প্রতিবাদে আগামী ২৫ জুলাই ঘাটালে বাজেটের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন সংগ্রাম কমিটি। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে গত ২৭ জুন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় জলশক্তি দপ্তরের মন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি দিয়েছিল ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন সংগ্রাম কমিটি।
আশ্চর্যের বিষয়, কেন্দ্রীয় সাধারণ বাজেটে এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য নেই! যদিও নির্বাচনের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী জানিয়েছেন, কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য সরকারের টাকাতেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করা হবে। বর্ষার পর সেকাজ শুরু হওয়ার কথা।