মৃত্যুতেও বিচ্ছেদ নয়, মৃত স্বামীর বুকে মাথা রেখেই চিরঘুমে স্ত্রী
এই সময় | ২৫ জুলাই ২০২৪
আটপৌরে ভালোবাসা। ১৮ বছরের নিয়তি প্রথম ছাদনাতলায় ২৫ ঊর্ধ্ব শঙ্কর মণ্ডলকে দেখেছিলেন। তারপর বাজার করা, ময়লা কাপড় জামা কাচার জন্য সাবান আনার ফর্দ, ট্যালটেলে কুমড়োর ঝাল, পান সেজে দেওয়ার মাঝে ভালোবাসাটা ছিল রক্তবীজ। কোনওদিন শেষ হয়নি। গত সোমবার রাতে ৮৫-র শঙ্কর যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই সময় শীর্ণ বুকে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদেছিলেন ৬৮-র নিয়তি। কিছুক্ষণ পর তাঁকে ডেকেও সাড়া পাননি পরিজনেরা। ৫৫ বছরের দাম্পত্য সঙ্গীর বুকে মাথা রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনিও। মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার ভোলতার ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার। স্বামীর শোকে স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে চর্চাও চলছে বিস্তর। স্থানীয়দের কথায়, ডিভোর্স-ঝগড়া-ব্লক-আনব্লকের ভেজাল ভালোবাসায় দেদার মিশছে। তার মধ্যে ভালোবাসার ছাকনিটা দিন দিন যেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে এই ঘটনা কি নিখাদ প্রেমের খাঁটি ছবি? চর্চা এলাকায়।শঙ্কর এবং নিয়তির সম্পর্কের বয়স ৫৫ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে সোমবার মৃত্যু হয় শঙ্কর মণ্ডলের। তাঁর মৃত্যুর পর বুকে মাথা রেখে কাঁদছিলেন নিয়তিদেবী। কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। মণ্ডল দম্পতির এক ছেলে, দুই মেয়ে। সকলেই বিবাহিত। নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার ছিল তাঁদের। শঙ্করবাবু দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। কয়েকদিন আগে তাঁকে ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনাও হয়েছিল। কিন্তু, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর ফের শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি।
প্রায় ছ’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরেই পরিবারের সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত স্বামীর বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিয়তিদেবী। স্বামীর বুকে মাথা রেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই ঘটনা গোটা গ্রামে চাউর হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। মণ্ডল পরিবারের প্রতিবেশী বিপাশা ঘোষ বলেন, 'আমার ২০ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনওদিন দাদু, দিদার মধ্যে মনোমালিন্যের কথা শুনিনি।' অপর বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডল বলেন, 'মন্দির থেকে আত্মীয়র বাড়ি যেখানেই তাঁরা যেতেই সেখানেই জুটিতে যেতেন। ছেলে মেয়েরাও তাঁদের যত্ন নিতেন।'
মঙ্গলবার সকালে গ্রামের মানুষ দুই জনের দেহ একসঙ্গে নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেয়। দু'টি দেহ বহরমপুর থানার সাঁটুই শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত দম্পতির ছেলে অনন্ত মণ্ডল বলেন, 'জন্মের পর বাবা-মাকে কোনওদিন আলাদা দেখিনি। সব কিছুতেই দুই জনের মতামত একই ছিল। মৃত্যুও তাঁদের আলাদা করতে পারল না।'