• ‌বাজেটে আর্থিকভাবে বঞ্চিত, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কি এগিয়ে গেল তৃণমূল? প্রশ্ন অনেকেরই...
    আজকাল | ২৫ জুলাই ২০২৪
  • বিভাস ভট্টাচার্য:‌ কেন্দ্রের বাজেটে আর্থিকভাবে এ ‌রাজ্য বঞ্চিত হলেও রাজনৈতিকভাবে লাভ হল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। বিশেষ করে দুই বছর বাদেই যখন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। 

    গত লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যের নির্বাচনে যে ইস্যুগুলি তৃণমূল সামনে এনেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল আবাস ও ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। গ্রাম বাংলায় গিয়ে এই দুটি ইস্যু নিয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিল তৃণমূল। তার আগে বিভিন্ন সভা সমিতি ও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই দুটি ইস্যু বারবার তুলে ধরেছেন। মমতার নির্দেশে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ, বিধায়ক ও দলের অন্যান্য প্রতিনিধি–সহ রাজ্যের বঞ্চিত মানুষদের একটি দল নিয়ে দিল্লিতে ধর্নায় সামিল হয়েছিলেন। ধর্নায় বসেছিলেন কলকাতায় রাজভবনের সামনেও। 

    যার ফল একেবারে হাতে হাতে লোকসভা নির্বাচনে পেয়েছিল তৃণমূল। গতবারের ১৮ থেকে আসন কমে বিজেপির দৌড় বাংলায় ১২টি আসনে থেমে যায়। তৃণমূল পায় ২৯টি আসন। মালদায় ১টি আসন পেয়ে খাতা খোলে কংগ্রেস। 

    এর আগে তৃণমূল যতবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে ততবারই বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে টাকার হিসাব না মেলাতেই কেন্দ্র ব্যয় বরাদ্দ করছে না। সেই দাবি শহরাঞ্চলে কিছুটা প্রভাব ফেললেও গ্রামাঞ্চলে যে প্রভাব ফেলতে পারেনি গত লোকসভা ও সদ্য হওয়া চার কেন্দ্রের বিধানসভার উপনির্বাচনই প্রমাণ। 

    এবারের বাজেট বঞ্চনার এই দাবিকে রাজ্যে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলল। কারণ, বন্যায় এরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও কেন্দ্রীয় বাজেট এবার এই খাতে দরাজ হস্ত হয়েছে বিহার–সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঘাটাল মাষ্টার প্ল্যান–এর জন্যও বরাদ্দ হয়নি কিছুই। 

    সব মিলিয়ে এই বাজেট নিয়ে যে তৃণমূল ফের বঞ্চনার অভিযোগে ‘‌গলা ফাটাবে’‌ তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। গোপনও করেনি তৃণমূল। 

    প্রাক্তন সাংসদ ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘‌এই বাজেটে রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজ্যবাসী যার জন্য ক্ষুব্ধ। আমরা এর বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিবাদে সামিল হব।’‌ আগামীদিনে তৃণমূল ফের বঞ্চনার অভিযোগে ‘‌দিল্লি চলো’‌র ডাক দেবে কিনা সে বিষয়ে কুণাল বলেন, দলীয় নেতৃত্ব আন্দোলনের সব দিকগুলিই খতিয়ে দেখছেন। 

    বাজেটে রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ না করেই রাজ্য সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌প্রশ্ন হল তৃণমূলের কি এর বিরুদ্ধে কথা বলার কোনও নৈতিক অধিকার আছে? শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন যখন সিপিএম চালাত এবং তৃণমূল যখন রাজ্যের বাজেট করত তখন আমরা কী দেখতাম বা এবছর নির্বাচনের পরেই বা আমরা তৃণমূল নেতাদের কী করতে দেখছি? মাথাভাঙ্গা, দিনহাটা বা যেখানে তৃণমূল ভোট পায়নি সেখানে তাঁদের নেতৃত্বের একটা বড় অংশ দাঁড়িয়ে বলছেন আমরা ভোট পাইনি তাই এটা বা সেটা বন্ধ করে দেব। আসলে রাজনীতিটাকে সম্পূর্ণ দখলদারির জায়গায় নিয়ে যেতে তৃণমূল বা বিজেপি কেউই পিছিয়ে নেই। আসলে সরকার পরিচালনার মূল নীতিটা আজ নড়বড়ে হয়ে গেছে রাজনৈতিক অবক্ষয়ের জন্য।’‌ 

    ‘‌কেন্দ্রের বঞ্চনা’‌র অভিযোগ কি এরাজ্যে আরও শক্তিশালী হল না? রাজ্য বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘‌যে পাঁচটি রাজ্যকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বাংলাও আছে‌। এবার তো অন্য রাজ্যও প্রশ্ন তুলবে বাংলাকে কেন বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে? একটা বাজেটে সবকিছু দেখা সম্ভব নয়। আর এবছর এমনকিছু বন্যা হয়নি যেটা ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রকে এগিয়ে আসতে হবে।’‌ 
  • Link to this news (আজকাল)