খায়রুল আনাম: সড়ক পথে বীরভূমকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে মুর্শিদাবাদ জেলা হয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে গাঁজা পাচার চক্র যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেল। এই পথে বাংলাদেশে গোরু পাচারে সাম্প্রতিককালে কিছুটা ভাটা পড়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতির কারণে। তাই এবার এই পথে বাংলাদেশে বিপুল চাহিদা থাকা মণিপুরি গাঁজা পাচারের রমরমা শুরু হয়েছে। আর এই কাজে পাচার চক্রের মূল মাথারা নেপথ্যে থেকে গিয়ে সুন্দরী মহিলাদেরই এখন বেশি বেশি করে ব্যবহার করছে। আর এই মাদক পাচারচক্রের সঙ্গে কাজ করতে করতে এই সুন্দরী মহিলারা এখন যথেষ্ট-ই পটু হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে মণিপুরি গাঁজা পাচারের জন্য বিশেষভাবে গাড়িতে প্রকোষ্ঠ তৈরী করে তা শান্তিনিকেতনের প্রান্তিক এলাকার একটি হোটেলকে কেন্দ্র করে মহিলাদের দিয়ে পাচার করা হচ্ছিল। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স প্রান্তিকের কাছে মহিষঢাল সেতুর উপরে দু’টি স্যুইফট গাড়ি আটক করে বিপুল পরিমাণের মণিপুরি গাঁজা উদ্ধার করে এবং শিপ্রা বণিক নামে উত্তর ২৪ পরগনার এক সুন্দরী মহিলাকে গ্রেফতার করে। এই চক্রের পাণ্ডাদের এক আত্মীয়ের প্রান্তিক এলাকায় একটি হোটেলও রয়েছে। এরপরই সিউড়ি থানার পুলিশ রেল পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সিউড়ি রেল স্টেশন এলাকা থেকে গাঁজা-সহ চারজন মহিলাকে আটক করে।
একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এদের গ্রেফতার করা হয় এবং সমগ্র ঘটনার ভিডিওগ্রাফি করা হয়। দু’টি ট্রলি ব্যাগে কাপড়চোপড়ের ভিতরে ভরে পনেরোটি সেলোটেপ আঁটা প্যাকেটে ভরে এই গাঁজা পাচার করা হচ্ছিল। এদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের মফুজা বেওয়া নামে মাঝ বয়সি এক মহিলা ছিলো এই পাচারচক্রের মাথা। অন্য তিন সুন্দরী মহিলা রঞ্জিতা সাহু, দময়ম্তি পাইকা ও সুদেষ্ণা পাইকার বাড়ি ওড়িশার গজপতি জেলার চণ্ডীপুরে। হাওড়া স্টেশন থেকে হুল এক্সপ্রেসে চেপে এরা সিউড়ি রেল স্টেশনে নামে। এখান থেকে গাঁজা-সহ এই মহিলাদের মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি এলেও, এই মহিলারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার বিষয়ে অবগত হয়ে গাড়ি নিয়ে চালক চম্পট দেয়। কিন্তু সড়ক পথে সুন্দরী মহিলাদের দিয়ে বীরভূমের উপর দিয়ে গাঁজা পাচার করার এই চক্রটি যে সক্রিয় রয়েছে তার হদিশ আবারও পাওয়া গেল।
এবার বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ গোপন সূত্রে খবর পায় যায় যে, দুর্গাপুর থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়া সরকারি বাসে মহিলাদের দিয়ে গাঁজা পাচার করা হচ্ছে। সেই সূত্রে বুধবার ২৪ জুলাই এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ সিউড়ি থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মহম্মদবাজারের রায়পুর গ্রামের কাছে দুর্গাপুর?মুর্শিদাবাদ রুটের একটি সরকারি বাসকে থামিয়ে তাতে তল্লাশি শুরু করে এবং বেশ কয়েকটি ব্যাগ-সহ তিনজন মহিলাকে আটক করে তাদের বাস থেকে নামায়। ওই ব্যাগগুলির ভিতরে সেলোটেপে মোড়া থরে থরে সাজানো প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। সেই প্যাকেটগুলিতে ছিলো মণিপুরি গাঁজা।
প্রাথমিকভাবে যার বাজার মূল্য ৭৫ লক্ষ টাকা বলে মনে করা হচ্ছে। এই মণিপুরি গাঁজা তারা কোথা থেকে নিয়ে এসে কোথায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।