কাউন্টারে মেলে না সব গন্তব্যের টিকিট, বেহাল পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ রেল যাত্রীরা
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: স্টেশনে নেই কম্পিউটারাইজড টিকিটিং সিস্টেম। নিকটবর্তী জংশন স্টেশন থেকে প্রিন্টেড টিকিট নিয়ে এসে তাতে স্ট্যাম্প মেরে দেওয়া হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। অধিকাংশ সময়ই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। ফলে স্বল্প দূরত্বের টিকিট নিয়ে বা বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। শান্তিপুর-শিয়ালদহ শাখার বাথনা কৃত্তিবাস স্টেশনের বেহাল টিকিট পরিষেবা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ রেল যাত্রীরা।
শান্তিপুর থেকে শিয়ালদহগামী সব ট্রেন স্টপেজ না দিলেও অধিকাংশ ট্রেনই দাঁড়ায় বাথনা কৃত্তিবাস স্টেশনে। শান্তিপুর ও ফুলিয়ার মাঝে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক যাত্রী একদিকে তিন কিলোমিটার দূরে থাকা শান্তিপুর জংশন এবং অন্যদিকে রানাঘাট, কল্যাণী, নৈহাটি সহ শিয়ালদহ শাখার বিভিন্ন স্টেশনগুলোতে যাতায়াত করেন। জানা গিয়েছে, বাথনা কৃত্তিবাস স্টেশনে কোনও সংরক্ষিত টিকিট কাউন্টার নেই। এমনকী অসংরক্ষিত কাউন্টারেও নেই কম্পিউটারাইজড টিকিটিং ব্যবস্থা। যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার জন্য রেলের কোনও স্থায়ী কর্মীকেও রাখা হয়নি এখানে। সত্যপ্রিয় দাস নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে বছরের পর বছর ধরে এই স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট দেওয়ার কাজ করে আসছেন। কম্পিউটারাইজড টিকিটিং সিস্টেম না থাকায় রোজ তাঁকে শান্তিপুর স্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন রুটের প্রিন্টেড টিকিট নিয়ে আসতে হয়। এরপর যাত্রীরা যে গন্তব্যে যাবেন, সেই স্টেশনের টিকিটে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তারিখটুকু বসিয়ে সেটি দেওয়া হয় তাঁদের। এভাবেই চলছে এই স্টেশনের যাত্রী পরিষেবা।
অভিযোগ, বর্তমানে বাথনা কৃত্তিবাস স্টেশনের অসংরক্ষিত কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিটও পাচ্ছেন না যাত্রীরা। কেউ চাকদহ যেতে চাইলে তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কল্যাণীর টিকিট, কেউ সোদপুর যেতে চাইলে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে শিয়ালদহের টিকিট। আবার এই স্টেশন থেকে কোনও যাত্রী ডায়মন্ডহারবারের টিকিট চাইলে বারুইপুরের পর আর কোনও স্টেশনের টিকিট নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী মাঝেমধ্যেই রানাঘাট যাওয়ারও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না এই স্টেশনের কাউন্টার থেকে। নিত্যযাত্রী সোমনাথ ঘোষ, পলাশচন্দ্র রায় বলেন, কখনও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেশি দূরত্বের কোনও স্টেশনের টিকিট কাটতে হচ্ছে। আবার কখনও গন্তব্যের আগের কোনও স্টেশনের টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে।
অনেক সময় টিকিট না মেলায় তাড়াহুড়ো করে বিনা টিকিটেই ট্রেনে উঠে পড়ছি। টিকিট চেকারদের ফাইনও দিতে হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। নিত্যযাত্রীদের আরও অভিযোগ, সন্ধ্যের পর টিকিট দেওয়ার অস্থায়ী কর্মীর দেখা মেলে না। একই ছবি দেখা যায় সকালের দিকেও।
মঙ্গলবার সকালে রানাঘাট যাওয়ার টিকিট কাটতে গেলে অনেককেই ‘টিকিট নেই’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনের অসংরক্ষিত কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী টিকিট কর্মী সত্যপ্রিয় দাসের বদলে সেখানে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ডলি দাস। তিনি বলেন, আমার স্বামী শান্তিপুর স্টেশনে টিকিট আনতে গিয়েছেন। তাই এই সময় তাঁর হয়ে আমি ডিউটি করছি। শান্তিপুর স্টেশন থেকে এখন সব রুটের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। তাই যে স্টেশনগুলোর টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, আপাতত সেগুলিই নিয়ে এসে দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। কেন এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা, তা নিয়ে স্টেশন মাস্টার তুষারকান্তি দাসকে জিজ্ঞেস করা হলে ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন’ বলে তিনি দায় এড়িয়েছেন। শান্তিপুর শাখা রেলযাত্রী সমিতির সম্পাদক নিখিল মজুমদার বলেন, রেলের ডিআরএম থেকে সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার পর্যন্ত প্রত্যেককে একাধিকবার লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। অন্তত এই স্টেশনে যদি একটি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়, তাতে সুরাহা মেলে যাত্রীদের। রেলের তরফে কোনও সদুত্তর আমরা পাইনি। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে এটিভিএম মেশিন বা কম্পিউটারাইজড টিকিটিং সিস্টেম চালু করার জন্য ভাবা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র