• আলু চাষিদের সর্বনাশ! ফড়েদের পৌষমাস 
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: চাষিরা মাঠে ৮-১০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছিলেন। সেই আলু বাজার থেকে তাঁদের ৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। চাষিরা কপাল চাপড়ালেও ফড়েদের পকেট ভারী হচ্ছে। ছোট চাষিরা চাষের খরচ তোলার জন্য মাঠেই আলু বিক্রি করে দেন। কেউ কেউ পরের বছর চাষ করার সার, বীজ কেনার জন্য কিছু আলু হিমঘরে রাখেন। চাষিদের বক্তব্য, হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর বেশিরভাগটাই ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের কব্জায় রয়েছে। অল্প টাকায় আলু কিনে তা তাঁরা চড়া দামে বিক্রি করছেন। বাড়তি লাভের জন্য এরাজ্যের চাহিদা না মিটিয়েই তাঁরা ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং অসমে আলু পাঠানোর চেষ্টা করছেন। প্রশাসন তাতে বাধা দিতেই তাঁরা বেঁকে বসেছেন। আচমকা ধর্মঘট ডাকার জন্য আলুর দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। বুধবার বিভিন্ন বাজারে আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

    জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় নামে এক ক্রেতা বলেন, ৪৫টাকা কেজি দরে এদিন আলু কিনতে হয়েছে। এরকম চলতে থাকলে সংসার চালানো দায় হয়ে যাবে। কৃত্রিমভাবে যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত। গলসির আলু চাষি অনুপ পাত্র বলেন, আমরা খরচ করে চাষ করি। এবার দু’বার বীজ বসাতে হয়েছে। সারের দাম আকাশছোঁয়া ছিল। অথচ প্রত্যাশিত দাম পাইনি। কেউ কেউ সাত টাকা কেজি দরেও মাঠে আলু বিক্রি করেছেন। এখন সেই আলু প্রায় সাত গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিবারই ফায়দা তোলে। অপর এক চাষি বলেন, হিমঘরে পর্যাপ্ত আলু আছে। তা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছে।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন আধিকারিকরা বিভিন্ন হিমঘর পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখেন। বর্ধমানের(সদর) মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আলু কিনে তা বিক্রি করছে। বাজারগুলিতেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। 

    কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিবৃষ্টির জেরে এবার পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলির আলু জমি নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার বীজ বসাতে হয়েছিল। ফলন অনেকটা‌ই কম হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ছোট আলু চাষিদের থেকে কিনতে হয়েছে। বাজারে সেগুলির চাহিদা নেই। কিন্তু ভিন রাজ্যে এধরনের আলু বিক্রি হয়। রাজ্যের সীমানা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ভিন রাজ্যে আলু পাঠানো যাচ্ছে না। তার প্রতিবাদেই তারা কর্মবিরতি ডেকেছে। ক্রেতারা বলেন, চাষিদের আলুর দাম পাওয়া উচিত ছিল। সেটা হয়নি। কিছু হিমঘর মালিক, ব্যবসায়ী ও ফড়েরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম ঠিক করে ফায়দা লুটছে। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না নিলে সবটা লাগামছাড়া হয়ে যাবে। 

     বর্ধমানের হিমঘরগুলিতে প্রশাসনের অভিযান।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)