• ঝাড়গ্রামের একমাত্র হিমঘরে হানা, মজুত ৭০ হাজার মেট্রিক টন আলু
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিনপুর: আলুর দাম লাফিয়ে বাড়ায় বাজারে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের। দামে লাগাম টানতে আচমকা ঝাড়গ্রাম জেলার একমাত্র হিমঘরে হানা দিলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, জেলার একমাত্র বেসরকারি হিমঘরে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। এদিন হিমঘর পরিদর্শনে যান ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসক শুভ্রজিৎ গুপ্ত, কৃষিদপ্তরের আধিকারিক অজয় শর্মা ও পুলিস-প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা হিমঘরে কত আলু মজুত রয়েছে খতিয়ে দেখেন। তাঁরা হিমঘর মালিকের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠকও করেন। এদিন প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, মার্চ মাস থেকে আলু মজুত হয়েছে। সেই আলু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ধাপে ধাপে বাজারে পাঠানো হবে। তাতে আলুর দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। একইসঙ্গে বেআইনিভাবে আলু ও সব্জি হিমঘর বা অন্য উপায়ে মজুত করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। 

    মহকুমা শাসক বলেন, আলুর জোগান নিয়ে একটা সমস্যা চলছিল। কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিডিলম্যান কর্মবিরতি করছিলেন। ফলে হিমঘর থেকে আলু বেরিয়ে আর বাজারে আসছিল না। বাজারে সব্জির দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি। সরকারি নির্দেশে হিমঘরের আলু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাজারে পাঠানো হবে। এতে আশা করছি আলুর দাম অনেকটাই কমবে। বেআইনিভাবে আলু বা সব্জি মজুত করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

    জেলার প্রতিটি ব্লকে ধান ছাড়াও আলু ও অন্যান্য চাষের প্রবণতা বেড়েছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন চাষিরা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কৃষিতে স্বনির্ভর হওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি শস্যবিমা, কৃষকবন্ধু সহ বিভিন্ন প্রকল্প কৃষিতে নতুন পথ দেখাচ্ছে। এতে ভরসা পাচ্ছেন চাষিরা। ক্ষতি হলেও তাঁদের মনোবল বাড়ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে আলু চাষে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এছাড়া লাভদায়ক চাষ হওয়ায় আলুর চাষ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। 

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় বিনপুর-১ ব্লকে। এই ব্লকে ধান চাষের পাশাপাশি আলু চাষে আগ্রহ দেখান চাষিরা। কারণ আলুর চাহিদা সারাবছরই থাকে। প্রতিবছরই জেলাজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। উৎপাদনের পরিমাণ ৫০হাজার মেট্রিকটন। প্রত্যেকদিন জেলায় কমবেশি ৫০-৬০মেট্রিকটন আলুর চাহিদা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে গত মরশুমে আলুর ক্ষতি হয়েছে। এরফলে ২০হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন কম হয়। যার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা। 

    ঝাড়গ্রামের চাষি সুদেব বেরা বলেন, চাষিদের কাছ থেকে জলের দামে আলু কেনে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এরপর তা মজুত করা হয় হিমঘরে। পরে আলুর জোগান কম বলে প্রচার চালানো হয়। এর ফাঁকে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর হিমঘর থেকে আলু বাজারে আনা হয়। এতে চাষিদের কোনও লাভ হয় না। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা গোপাল সেন বলেন, সব রান্নায় আলু লাগে। কিন্তু এবার প্রচুর দাম। প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। হিমঘর মালিক প্রণবেশ পাত্র বলেন, আধিকারিকদের নির্দেশ অনুসারে আলু বাজারে ছাড়া হবে। এই আলু লোকাল চাষিদের থেকে আনা। এতে আশা করছি আলুর দাম কমতে বাধ্য। 
  • Link to this news (বর্তমান)