নির্মাল্য সেনগুপ্ত, রায়গঞ্জ: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাগান থেকে পাতা তোলা শেষ করতে হবে বলে নোটিস জারি করেছিল টি বোর্ড। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহারের চা চাষিরা। এবার টি বোর্ডে চিঠি দিয়ে নোটিস প্রত্যাহারের দাবি জানাল চা চাষিদের ৮টি সংগঠন।
তাদের দাবি, নেপালে সারা বছর চা পাতা তোলা হয়। সেক্ষেত্রে সেখানে চা চাষে তেমন প্রভাব পড়ে না। উল্টে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় যে সময়টায় ফলন হতে থাকে, তখন পাতা না তোলায় চা চাষে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পাতা তোলা বন্ধ করা হয়। এবার টি বোর্ড নির্দেশিকায় জানিয়েছে, ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ থাকবে চা বাগানের পাতা তোলা। তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে চা শিল্পমহল। এতদিন সেই ক্ষোভ মৌখিকভাবেই জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। এবার টি বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে পাতা তোলা বন্ধের নোটিস প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুর স্মল টি গ্রোয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস পাল বলেন, এবারও অতি খরা, অতি বৃষ্টিতে চা পাতা উৎপাদনে অনেক পিছিয়ে চা চাষিরা। এমন অবস্থায় টি বোর্ড চা পাতা তোলার সময়সীমা এগিয়ে নিয়ে আসায় বড় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা। একইভাবে চোপড়া স্মল টি প্লান্টার্স সোসাইটির সম্পাদক পার্থ ভৌমিক বলেন, টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোটেই সময়োপযোগী নয়। আমরা আলোচনা করে উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা মিলে টি বোর্ডের নোটিস প্রত্যাহারের দাবি করেছি।
উত্তর দিনাজপুর জেলার ২৫ থেকে ২৮ হাজার ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। যার সঙ্গে চাষিদের পরিবারের সদস্যরাও যুক্ত। এছাড়াও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষুদ্র ও বড় চা বাগান রয়েছে। সেগুলিও টি বোর্ডের নির্দেশে সমস্যার মুখে। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, এখানকার চা শিল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িতদের সঙ্গে কথা না বলে টি বোর্ড এটা ঘোষণা করেছে। উত্তরবঙ্গে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ চা উৎপাদন কমেছে। সঙ্গে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চাষের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনিতেই ক্ষুদ্র চা চাষিরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। তাঁরা এখন রাজ্যের ৬৫ শতাংশ চা উৎপাদন করেন। ১০ লক্ষাধিক মানুষ এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। প্রতিবারই ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চা পাতা তোলা যায়। তার ফলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের রোজগারের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু এবার পাতা তোলার সময় কমানোয় ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের খরচ কীভাবে চালাব, সেটাই এখন চিন্তার। তাই বিতর্কিত ওই নোটিস প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে সম্মিলিতভাবে।