• মন্ত্রী হয়েই উত্তরবঙ্গ ভাগের তদ্বির সুকান্তর, মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পরই তোলপাড় বাংলা
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও সংবাদদাতা, গঙ্গারামপুর: ফের বাংলা ভাগের দাবি! আগের দফায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা। তা নিয়ে জলঘোলাও হয় বিস্তর। এবার একধাপ এগিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উত্তরবঙ্গ ভাগের তদ্বির করলেন সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তবে সরাসরি নয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করার কৌশলে। বিষয়টি সামনে আসতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল। বিতর্কের আবহের মধ্যেই আজ দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক। তার মধ্যেই বাংলা ভাগের বিরোধিতায় তিনি সরব হবেন বলে খবর।

    বুধবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠক করেন বুধবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গের মধ্যে কী কী মিল রয়েছে, তা উল্লেখ করে আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছি যাতে, উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন। যদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ যুক্ত হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে। এই এলাকা অনুন্নত। ফলে উন্নয়নও হবে। এতে মনে হয় রাজ্য সরকারের সহায়তা পাব আমরা।’ বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যের পরেই তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, নিজের মন্ত্রকের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করে আদতে কি সেখানকার অলিখিত ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বালুরঘাটের সাংসদ? নাকি কেন্দ্রে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসীন হয়ে আদতে বাংলার মানুষকে বঙ্গভঙ্গ ‘উপহার’ দিতে চলেছেন মোদি? সুকান্তর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। বলেছেন, ‘শুধু সুকান্ত মজুমদার কেন, গোটা বিজেপিই বাংলাকে ভাগ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলার উন্নয়নে বিজেপি সরকার ব্যর্থ। তাই এখন উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার জিগির তুলে উন্নয়ন দেখানোর চেষ্টা করছে। বাংলার উন্নয়ন করতে হলে উত্তরবঙ্গকে আলাদা ভাবতে হবে কেন? এতেই স্পষ্ট, বাংলা ভাগের বিজেপির ষড়যন্ত্র এখনও থামেনি।’

    উত্তরবঙ্গ ভাগের দাবি তোলার পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও মোদির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সুকান্তর কথায়, ‘উনি সংগঠন নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহী। ফলে তা নিয়ে কথা হয়েছে।’ বিজেপি সূত্রের দাবি, বৈঠকে উঠে আসে বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য সভাপতির ইঙ্গিতপূর্ণ জবাব, ‘মোদিজি সব জানেন।’

    ২০২১ সালে উন্নয়ন-ইস্যুকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবি তুলেছিলেন জন বারলা। তবে এবারের বিষয়টি অনেকটাই আলাদা বলে মত রাজনৈতিক মহলের। রাজ্য সভাপতি হওয়ায় বাংলায় দলের যাবতীয় সাংগঠনিক দায়ভার সুকান্তবাবুর উপরে বর্তায়। ফলে মনে করা হচ্ছে, তাঁর এই প্রস্তাবে আদতে বিজেপির কেন্দ্রীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশেরও প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, এর অর্থ একটাই—মুখে বিজেপির শীর্ষ নেতারা যাই বলুন না কেন, তলে তলে বঙ্গভঙ্গের ব্যাপারে তাঁরা ভীষণভাবে সক্রিয়।

    এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে গেরুয়া শিবির। সাফাই দিয়ে বলা হয়েছে, সুকান্তবাবু বাংলা ভাগের কথা বলেননি। উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রকল্প একসঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কথা বলতে চেয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে অযথা রাজনীতি করছে বিরোধীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)