শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: গ্যাংস্টার সুবোধ সিং ওরফে দিলীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে তার ‘চিরশত্রু’ ফুল্লা সিং ও চন্দনের বয়ানই বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সিআইডির কাছে। বেউর জেলে বসে সুবোধ কীভাবে ফোন করে তোলা দাবি করত এবং টাকা কোথায় পৌঁছনোর কথা বলত, তার পুরো তথ্যই এই দু’জন তদন্তকারী আধিকারিকদের সামনে ফাঁস করে দিয়েছে বলে খবর। তাদের এই বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট জেল সুপারের চাপ বাড়ল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
বেউর জেল যে কার্যত সুবোধের ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছিল, আগেই জেনেছেন তদন্তকারীরা। কারাগারে তার সেল যে কোনও পাঁচতারা হোটেলের রুমকেও হার মানাবে! টিভি,মোবাইল ইন্টারনেট থেকে শুরু করে সবকিছুর ব্যবস্থা ছিল জেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই। এখানে বসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গ্যাংয়ের সদস্যদের সে নিয়ন্ত্রণ করত। নির্দেশ দিত কোন জায়গায় কখন অপারেশন চালাতে হবে। সেই সঙ্গে জেলে বসেই চলত ফোনে হুমকি দেওয়া। সেই কারণে তদন্তকারীরা এমন একজনকে খুঁজছিলেন, যে জেলে সুবোধের যাবতীয় কাজকর্মের সাক্ষী। এক্ষেত্রে তাঁদের কাছে তুরুপের তাস হয়ে দাঁড়ায় বিহারে সুবোধের চিরশত্রু বলে পরিচিত ফুল্লা সিং। ডাকাতি ও খুনের একাধিক ঘটনায় এই অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরেই বেউর জেলে বন্দি। ২০১৮ সাল থেকে সুবোধের সঙ্গে তারও ঠিকানা এই জেল। পাশাপাশি সেলেই দু’জনের থাকার ব্যবস্থা ছিল। গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, ফুল্লার বয়ান মামলাকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাবে। গ্যাংস্টারের প্রতিপক্ষ সুবোধ সম্পর্কে বলতে রাজি হওয়ার পরই তার বয়ান নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ফুল্লা ও তার সহযোগী চন্দন দু’জনেই তদন্তকারীদের জানিয়েছে, সুবোধকে বেউর জেল কর্তৃপক্ষের একাংশ বিভিন্নভাবে সাহায্য করত। তাদের প্রশ্রয় ও মদতেই গ্যাংস্টারের সেল হয়ে উঠেছিল পাঁচতারা হোটেলের রুম। এখানে বসে সুবোধ ভিডিও কলে মিটিং করত বাইরে থাকা সহযোগীদের সঙ্গে। কোথায় কীভাবে অপারেশন হবে এবং কারা টিমকে ‘লিড’ করবে, সবটাই সুবোধ এখানে বসে ভিডিও কলে নির্দেশ দিত। সেই সঙ্গে লুটের পর সোনাদানা তার ডেরায় পৌঁছনোর নির্দেশও দেওয়া হতো। বাইরের কাউকে ফোন করার জন্য ব্যবহার করত ভিওআইপি কল। শুধু তাই নয়, জেলে তার পছন্দমতো খাবার চলে আসত। তাকে ‘পাহারা’র দায়িত্বে ছিল জেলেরই দুই সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত অপরাধী। ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করেছে ফুল্লা ও চন্দন। তদন্তকারীদের বক্তব্য, জেল থেকেই সুবোধের হুমকি ফোন যাওয়ায় এই দুই জেলবন্দির বয়ান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা আদালতে পেশ করা হবে। পাশাপাশি, এই দু’জনের গোপন জবানবন্দি করানো যায় কি না, তা নিয়েও আইনি পরামর্শ চলছে বলে খবর।