নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বাংলাকে ‘বঞ্চনা’র সাফাই দিতে সেই বাংলাকেই কাঠগড়ায় তুলছে বিজেপি! মঙ্গলবার সংসদে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এবারের বাজেটে রেলের জন্য ‘রেকর্ড’ ২ লক্ষ ৬২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। বুধবার তারই রাজ্যভিত্তিক বরাদ্দের খতিয়ান প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। আর সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তুলোধনা করেছেন তিনি। এদিন তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ আমলে বাংলার জন্য রেলে প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ হতো। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে সেই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে বাংলার বিভিন্ন রেল প্রকল্পে ১৩ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাংলা থেকে ইতিপূর্বে একাধিক রেলমন্ত্রী থাকলেও কখনও এত বরাদ্দ করা হতো না।’ এ প্রসঙ্গেই রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর দিকে নজর দিক। কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করুক। অর্থের অভাব হবে না। বাংলায় এখন প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার রেল প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০০টি স্টেশনের মানোন্নয়ন হচ্ছে অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায়।’
যদিও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিভিন্ন রাজ্যকে রেল এবার ইউপিএ আমলের থেকে কত বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে, সেই খতিয়ান প্রকাশ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জোনভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প সংবলিত পিঙ্ক বুক এদিন রাত পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। যা কার্যত বেনজির। প্রশ্ন উঠছে, বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ‘বঞ্চনা’র পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে না চাওয়াই এর অন্যতম কারণ? যদিও রেলমন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই বিস্তারিত খতিয়ান প্রকাশ করা হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে একাধিকবার বাংলার বিভিন্ন রেল প্রকল্পে নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ করেছে মোদি সরকার। এবারও কি সেই পথেই হাঁটছে রেল? এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী পুরো দায় ঠেলে দিয়েছেন রাজ্যের ঘাড়েই। বৈষ্ণব বলেছেন, ‘বাংলায় জমির সমস্যার সবথেকে বেশি। জমি অধিগ্রহণ ঠিকমতো করে দিক রাজ্য সরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখুক। কলকাতা মেট্রো সহ বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা পেতেও সমস্যা হবে না।’
যদিও তৃণমূলের কটাক্ষ, শুধু বাংলা নয়। সার্বিকভাবে রেলযাত্রীরাই বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বুধবার লোকসভায় তৃণমূল এমপি দীপক অধিকারী (দেব)র কোভিড পর্বে বন্ধ রেলের কনসেশন ফের চালু সংক্রান্ত প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে রেলমন্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ট্রেনের টিকিটে ৫৬ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তা আদতে গড়ে প্রত্যেক রেলযাত্রীকে ৪৬ শতাংশ কনসেশন দেওয়ার সমান। আবার টিকিট বাতিল এবং জেনারেল কোচকে থার্ড এসিতে পরিণত করা থেকে রাজস্ব আদায় নিয়ে তৃণমূল এমপি মালা রায়ের প্রশ্নের লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, এহেন তথ্য রেল সংবলিত করে না!