ফড়ে নয়, শুধু চাষির ধান কিনতেই একগুচ্ছ ব্যবস্থা, খাদ্যদপ্তরের উদ্যোগে ক্রয় শুরু নভেম্বরে
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আগামী খরিফ মরশুমে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে খাদ্যদপ্তর। শুধু প্রকৃত চাষিরাই যাতে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যে (এমএসপি) ধান বিক্রি করে আর্থিক লাভ পেতে পারেন তার জন্য একগুচ্ছ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। চাষির বেনামে ফড়েরা যাতে সরকারের কাছে ধান বিক্রি লাভের গুড় খেয়ে না যেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী খরিফ মরশুমের জন্য ধান কেনা নিয়ে কিছুদিন আগে খাদ্যশ্রী ভবনে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং পঞ্চায়েত ও সমবায়মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সেখানে ধান কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ খরিফ মরশুমে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হবে আগামী নভেম্বর থেকে। তার আগে সবরকম প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও সরকারি সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এবারও পুরো খরিফ মরশুমে একজন চাষি সর্বোচ্চ ৯০ কুইন্টাল ধান সরকারের কাছে বেচতে পারবেন। যেহেতু ছোট ও মাঝারি চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনায় সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে, তার জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়। খাদ্যদপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, বেশি সংখ্যক চাষিকে সরকারি দামে ধান বিক্রি করার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কোনও চাষির বেনামে ফড়েরা যাতে ধান বিক্রি করতে না পারে তার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯০ কুইন্টালের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও একজন চাষি কতটা পরিমাণ ধান বেচতে পারবেন তা নির্ভর করবে তাঁর জমির পরিমাণ এবং ওই জমির উৎপাদনশীলতার উপর। এব্যাপারে কৃষিদপ্তরের কৃষক বন্ধু পোর্টালের সাহায্য নেওয়া হবে। নথিভুক্ত চাষির জমির পরিমাণ কতটা, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে তা পোর্টালে থাকে। এলাকার জমিতে ধানের উৎপাদনশীলতা কতটা সেই ব্যাপারে কৃষিদপ্তরের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। তবে একইসঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত চাষির জমির পরিমাণ যতটাই হোক না কেন, তিনি অন্তত ৩০ কুইন্টাল জমি সরকারের কাছে বেচতে পারবেন।
সরকারের কাছে ধান বেচার জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত চাষির নাম নথিভুক্ত করার সময় তাঁর আধারের বায়োমেট্রিক বা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। কোনও চাষি আগের মরশুমে বিক্রির জন্য নাম নথিভুক্ত করে থাকলে নতুন করে ফের তা করার প্রয়োজন পড়বে না। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে জমির মালিক চাষি ছাড়াও নথিভুক্ত বর্গাদাররা নাম লেখাতে পারেন। অনথিভুক্ত বর্গাদার, যাঁর নাম কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নেই, তিনিও সরকারের কাছে ধান বেচতে পারবেন। অনেক চাষি অন্যের জমি লিজ বা ভাড়া নিয়ে ধান চাষ করে থাকেন। জমি অনেকসময় মৌখিকভাবেও লিজে নেওয়া হয়। এই ধরনের চাষিরাও সরকারের কাছে ধান বেচতে পারবেন। কিন্তু চাষির নামে কোনও ফড়ে যাতে ধান বেচতে না-পারে তার জন্য এখানেও বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই চাষির সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে তবেই নাম নথিভুক্ত করা হবে।