‘দাম বাড়লে পেঁয়াজ বন্ধ করা যায়, আলু অসম্ভব’, ধর্মঘটের জেরে সঙ্কট
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আলুর দাম বাড়তে বাড়তে আপাতত কোথাও কেজিতে ৪০, কোথাও ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। দাম কবে কমবে তার আশায় হাঁ করে বসে সবাই। তবে দাম যতই চড়ুক, আলু ছাড়া বাঙালির জীবন ‘আলুনি’।
বিরিয়ানিতে যদি আলু না থাকে? কিংবা যদি ভাত-ডালের সঙ্গে একটুও আলু ভাজা বা আলুভাতে না থাকে? মাছের ঝোলে ফালি করে কাটা আলু না থাকে? মুখ ব্যাজার আপামর বাঙালির। মধ্য-নিম্নবিত্তের বাড়ি তো বটেই রাস্তার ভাতের হোটেলগুলিতেও বছরভর আলুর ব্যাপক চাহিদা। অফিস পাড়ায় যাঁরা সস্তার বিরিয়ানি দিয়ে টিফিন করেন, তাঁদের প্রথম পছন্দ চালে ডুবে থাকা বড় মাপের আলুটি। ফলে ৪০/৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হলেও দোকানদারদের আলু রাখতেই হচ্ছে। না হলে হাতছাড়া খদ্দের। ব্যবসা মাটি। রাস্তার ধারের বিরিয়ানি কিংবা ভাতের হোটেলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাওয়াদাওয়া করেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘দু-পাঁচ টাকা বেশি দিতে হলেও আলু ছাড়া তরকারি খাওয়া যাবে না। পেঁয়াজের দাম বাড়লে কাঁচা পেঁয়াজ দেয় না দোকানদাররা। সেটা তবুও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আলু ছাড়া খাব কী?’
এদিকে উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় বুধবার বিকেলেও দেখা গিয়েছে, জ্যোতি আলুর দাম কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। চন্দ্রমুখীর দাম ৫০ ছুঁয়েছে। অনেকে ভয়ে চন্দ্রমুখী রাখছেনই না। অনেক অতি চালাক দোকানদার আবার বস্তাভর্তি আলু লুকিয়ে রাখছেন। দাম আরও বাড়তে পারে তখন বেশি লাভে বিক্রি করবেন এই ভেবে।
দেশপ্রিয় পার্ক এলাকার এক বিরিয়ানি বিক্রেতার কথায়, ‘আলু ছাড়া তো আর বিরিয়ানি করতে পারি না। শসা-পেঁয়াজের দাম বাড়ায় স্যালাড বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু আলু বন্ধ করা যায় না। দাম বেড়ে যাওয়ায় কম লাভ হচ্ছে। তাই বিক্রি করছি বাধ্য হয়ে।’ গড়িয়াহাটের এক ফাস্ট ফুড দোকানের বিক্রেতা বলেন, ‘খাবারের দাম বাড়লে চলবে না। আলুর দাম নিশ্চয়ই কমবে। এখন তাই লস করেই ব্যবসা করছি।’ কলকাতায় দুপুরের পর ফুটপাতে শুরু হয়ে যায় আলুর দম, ফুচকা, তেলেভাজা খাওয়ার হিড়িক। সেখানেও আলুর প্রয়োজন। শ্যামবাজারের এক চপ বিক্রেতা বলেন, ‘আমি ছোট মাপের আলু কিনি। পাঁচ কিলো কিনলে, ১০ টাকা কমে পাই। এখন পাচ্ছি না। ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কি করব? আলু ছাড়া আলুর চপ হয়? তাহলে কি চপ বিক্রিই বন্ধ করে দেব? আচমকা চপের দাম ১০টাকাও তো করে দিতে পারি না।’
দাম যাই হোক, বাঙালির পাতে আলু থাকতেই হবে। চপ খেতে খেতে এক ক্রেতার বক্তব্য, ‘যদি দু’টাকা বেশি নেয়, নিক। আলু ছাড়া কী করে খাব? বাড়িতে কী এক কিলোর জায়গায় ৫০০ কিনলে চলবে। কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে। দোকানেও তাই। না হলে খদ্দের আসবে না। আলু ছাড়া আমাদের জীবন চলে না। তার সুযোগই নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর আমরা অসহায়।’