• টোটোর দাপটে মেট্রো চ্যানেলের ছন্নছাড়া হাল, রাস্তা দখল হয়ে গেলেও নির্বিকার পুলিস
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: হাওড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র হল বঙ্গবাসী মোড় এবং হাওড়া ময়দান এলাকা। এই এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বাস যেমন পাওয়া যায়, তেমনই মেলে গঙ্গার তলা দিয়ে ছুটে চলা মেট্রো রেল। স্বভাবতই যাত্রীদের কোলাহলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গমগম করে এলাকা। তবে টোটোর দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে হেঁটে গিয়ে মেট্রো বা কোনও বাস ধরাই দায় হয়ে পড়েছে। শুধু টোটো নয়, বঙ্গবাসীর ব্যস্ত মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে দু’-চারটি বেসরকারি রুটের বাসও। মেট্রো যখন চালু হয়েছিল, তখন পুলিস কিছুটা তৎপর হয়ে রাস্তাকে গতিশীল করলেও মাস খানেকের মধ্যেই যে কে সেই অবস্থা! পুলিসের ঢিলেঢালা মনোভাবই একারণে দায়ী। তাদের নাকের ডগাতেই চলছে টোটো-রাজ।

    গত মার্চ মাসে ‘মেট্রো’ শহরের শিরোপা পায় হাওড়া। দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো জুড়েছে দুই যমজ নগরীকে। যখন পরিষেবা চালু হয়, সেই সময় হাওড়া ময়দান মেট্রো চ্যানেলের হাল ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রশাসন। তৎপরতা দেখিয়েছিল হাওড়া সিটি পুলিসের ট্রাফিক বিভাগ। মূলত হাওড়া ময়দান চত্বরকে খালি রাখাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এতে শুধু যানজটের সমস্যাই দূর হয়নি, গোটা ময়দান চত্বরে গজিয়ে ওঠা অবৈধ টোটো স্ট্যান্ডগুলিকেও সরানো গিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন কাটতে না কাটতেই পুলিস রাশ আলগা করায় আবার আগের হাল ফিরে এসেছে। টোটোর ভিড় স্তব্ধ করে দিচ্ছে রাস্তার স্বাভাবিক গতিকে। বিনা প্রয়োজনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকছে টোটোগুলি। পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি রুটের বাসও যাত্রী তোলার আছিলায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে রাস্তাজুড়ে। মেট্রো চ্যানেল এখন কার্যত পুলিসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি জায়গা জবরদখলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরেও টনক নড়েনি হাওড়া সিটি পুলিসের। দখল হওয়া ফুটপাতকে মুক্ত করার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ তাদের তরফে দেখা যায়নি। যদিও ফুটপাতের সমস্যা নিয়ে প্রশাসন সম্প্রতি সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দখল হওয়া রাস্তা কেন খালি করা হবে না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। এখন প্রতিদিন মেট্রোয় চেপে কাজে যান স্থআনীয় বাসিন্দা তুহিন লাহা। তাঁর অভিজ্ঞতা, মেট্রো চালু হওয়ার সময় প্রথম কয়েকদিন ময়দান চত্বরের হাল ফিরেছিল। এখন আবার অবস্থা একই। রাস্তা দখল করে ঝাঁকে ঝাঁকে দাঁড়িয়ে থাকে টোটো। হেঁটে মেট্রো স্টেশন যেতেই কালঘাম ছুটে যায়। ফুটপাত দিয়ে তো হাঁটাই যায় না। সেসব কবেই দখল হয়ে গিয়েছে। এসব দেখেও পুলিস কী করে চুপচাপ বসে থাকতে পারে? আরেক নিত্যযাত্রী জেসমিন খান বলেন, হাওড়া ময়দান হল এই শহরের প্রাণকেন্দ্র। টোটোর উৎপাত ও বেসরকারি বাসগুলির দাপট ঠেকাতে পারে একমাত্র পুলিসই। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড কেন করে দেওয়া হচ্ছে না? ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চলে। সেসব দখল হয়ে যাওয়ায় এখন বহু হকার রাস্তার একাংশ দখল করে অস্থায়ী দোকান করেছে। বাকি অংশে গজিয়ে উঠেছে টোটোর বেআইনি স্ট্যান্ড। ফলে  বাধ্য হয়েই বিশাল চওড়া জি টি রোডের মাঝখান দিয়ে আমাদের হাঁটতে হয়। 

    রাস্তা দখল নিয়ে পুরসভার এক কর্তা বলেন, হকার নিয়ে সমীক্ষা চলছে। ওই চত্বরের হকারদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তা দখল কখনই নেওয়া হবে না। নিশ্চয়ই পুলিস পদক্ষেপ করবে। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিসের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) সুজাতা কুমারী বীণাপাণিকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এমনকী, মেসেজ পাঠানো হলেও তার উত্তর দেননি।
  • Link to this news (বর্তমান)