চুরি রুখতে বাগানে বিদ্যুতের তার, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট নবমের ছাত্র
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বনগাঁ: পেয়ারা চুরি ঠেকাতে বাগানজুড়ে বিদ্যুৎবাহী তার ছড়িয়ে রেখেছিলেন বাগানের মালিক। সেই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর জখম হল নবম শ্রেণির এক ছাত্র। ওই ছাত্রের নাম তন্ময় রায় (১৫)। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে পলাতক পেয়ারা বাগানের মালিক অর্জুন রায়। এর প্রতিবাদে অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় লোকজন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার পল্লিশ্রী এলাকায়।
জানা গিয়েছে, অর্জুন রায় পল্লিশ্রী এলাকায় নিজের বাড়ির পাশেই প্রায় দু’বিঘা জমিতে পেয়ারা ও বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন। ফল চুরি ঠেকাতে পাঁচ ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন বাগানটি। কিন্তু তাসত্ত্বেও ফল চুরি ঠেকাতে পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ চুরি আটকাতে পাঁচিলের উপর জাল দিয়ে ঘিরে দেন। তাও সুযোগ বুঝে কেউ বা কারা বাগানে ঢুকে ফল চুরি করে নিচ্ছিল। এরপরই দুষ্কৃতীদের শিক্ষা দিতে বাগানের চারপাশে জিআই তার লাগিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেন অর্জুন রায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেয়ারা পারতে গিয়ে সেই তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জখম হয় তন্ময়। বনগাঁর কবি কেশবলাল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সে।
ফলের বাগানের পাশের জমিতে খেলা করে ছেলেরা। অনেক সময় বাগানে বল চলে গেলে আনতে যেত তারা। কেউ কেউ দু’-একটা ফলও পারত। জানা গিয়েছে, তন্ময়ের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। বনগাঁ ঢাকাপাড়ায় মামার বাড়িতে থাকে সে। ওইদিন খেলার পর সে বন্ধুদের সঙ্গে পাঁচিল টপকে ওই বাগানে পেয়ারা পারতে যায় বলে জানা গিয়েছে। তখনই সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। বন্ধুরা ভয়ে তাকে ফেলেই পালিয়ে যায়। ওই অবস্থায় কিছুক্ষণ সেখানে পড়ে থাকে তন্ময়। এক বন্ধুর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় লোকজন গিয়ে তন্ময়কে উদ্ধার করে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় পল্লিশ্রী এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জু বিশ্বাস বলেন, ‘অর্জুন রায় এলাকায় সেভাবে মেলামেশা করেন না। বাগানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা আমরা জানতাম না। জানলে পুলিসে খবর দিতাম’। তন্ময়ের বন্ধু ধীরাজ বিশ্বাস জানায়, ‘আমরা এখানে রোজই খেলা করি। অনেক সময় বাগানে বলে চলে যায়। বল আনতে যেতে ভয় লাগে’। স্থানীয় বাসিন্দা মিলন দাস বলেন, ‘বাচ্চাদের ভয় দেখাতে বাগানের মালিক বলতেন, কারেন্ট দেওয়া আছে। সত্যিই যে তিনি বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন, তা জানতাম না’। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত অর্জুন রায় পলাতক। বাড়িতে তালা ঝুলছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।