পুলিশের ইনফর্মার থেকে কী ভাবে বেউরের বাদশা হলো সুবোধ?
এই সময় | ২৫ জুলাই ২০২৪
তার ‘কেরিয়ার’ শুরু হয়েছিল পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে। তখনই মেলামেশা শুরু হয় অপরাধীদের সঙ্গে। সেটাই ছিল বিহারের নালন্দার ছাপোষা পরিবারের ক্লাস এইট পাশ ছেলে সুবোধ সিংহের অপরাধে হাতেখড়ি। তারপর রকেটের গতিতে তার উত্থান। গত ছ’বছর ধরে বিহারের বেউর জেলে বসে প্রায় সাতটি রাজ্যে নিজের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল সে।সেখানে ২২ নম্বর সেলের তিনটে ঘর-জুড়ে তার সেই টিভি, এয়ারকুলার লাগানো ডেরা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা কাহিনি। পশ্চিমবঙ্গ চিরকালই ছিল তার প্রিয় ‘টার্গেট’। এ রাজ্যের সঙ্গে তার যোগ বেশ পুরোনো। সূত্র বলছে, ২০০৮ সালের আগে বিহারের কোনও একটি মামলায় ওয়ান্টেড হয়ে পালিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল সুবোধ। কিন্তু, চুপ করে বসে থাকেনি।
২০০৯-২০১০ সাল নাগাদ ব্যারাকপুরের ১৪ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন আনন্দপুরীর কাছে একটি ব্যাঙ্কে ডাকাতির ঘটনায় রাজ্য পুলিশের খাতায় প্রথমবার নথিভুক্ত হয় সুবোধের নাম। জানা যায়, কলকাতার বড়বাজারের একটি গোপন আস্তানা থেকেই রেকি হয়েছিল সেই ডাকাতির। ওই ঘটনায় সুবোধ গ্রেপ্তারও হয়। ২০১১-র পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সীমানা পেরিয়ে বিহারে পৌঁছয় সে।
২০১৬ সালে বরাহনগরের ডানলপ মোড়ের কাছে একটি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতির ঘটনায় আবারও নাম জড়ায় সুবোধের। সে সময় তার টিমের বেশিরভাগ সদস্য ধরা পড়লেও অধরা ছিল সে। ২০১৭-র ডিসেম্বরে আসানসোলের হিরাপুরে একটি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতির ঘটনাতেও উঠে আসে সুবোধের নাম। অতিষ্ট হয়ে ওঠে রাজ্যের পুলিশ। বিহার পৌঁছেও তার নাগাল পাওয়া যায় না।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, তখন বিভিন্ন রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়ের সোনার দোকান, স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় উঠে আসতে থাকে সুবোধের নাম। ছ’সাতটি রাজ্যের পুলিশ পাগলের মতো খুঁজতে শুরু করে তাকে।
একাধিক রাজ্যে তার বিরুদ্ধে হুলিয়াও জারি হয়। তাড়া খেতে খেতে সুবোধ বিহারের গোপন আস্তানা হাজিপুরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর তার কয়েকদিনের মধ্যেই ২০১৮-র জানুয়ারিতে বিহারের রাজীবনগর রূপাসপুর থানায় কয়েকশো কেজি সোনা-সহ বিহার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। তখন থেকে গত ছ’বছর সে বেউর জেলে বন্দি।
তাতে অবশ্য তার সাম্রাজ্য চালাতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর ব্যারাকপুরের রাজনীতির স্ট্রংম্যান ও অর্জুন সিংয়ের ছায়াসঙ্গী মণীশ শুক্লাকে টিটাগড় থানার অদূরে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় দুষ্কৃতীরা। আবার নাম জড়ায় সুবোধের। পুলিশেরই একটি সূত্র বলছে, মণীশ খুনের পরে ব্যারাকপুর কার্যত ফাঁকা মাঠ হয়ে যায় সুবোধের কাছে। সে এখানে নিজের নেটওয়ার্ক বিস্তারে মনে দেয়।
এ বছরের ১৫ জুন বেলঘরিয়া রথতলা মোড়ে বিটি রোডের উপর গাড়ি ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি। অজয়কে ভয় দেখিয়ে শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মনে ত্রাস সঞ্চার করে তাদের এক ছাতার নীচে আনতে চেয়েছিল সে। উদ্দেশ্য ছিল ব্যারাকপুরের অপরাধ সিন্ডিকেটকে আরও শক্তিশালী করা। এই ঘটনাতেই রাজ্যের পুলিশ বিহারের জেল থেকে এখানে এনে সুবোধকে জেরা শুরু করেছে।