দক্ষিণবঙ্গে এখনও সে ভাবে বর্ষা না নামলেও মাঝেমধ্যে ঝমঝমিয়ে নামছে বৃষ্টি। কখনও আবার দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি, সঙ্গে হালকা হাওয়া। এ রকম আবহাওয়াতেই বাড়বাড়ন্ত হয় ডেঙ্গির। বিশেষ করে নির্মীয়মাণ বহুতলের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে মশার লার্ভা বংশবিস্তার করে দ্রুত। তাই এই মুহূর্তে নিউ টাউনের বহুতল আবাসনগুলির পাশাপাশি নির্মীয়মাণ বহুতল, মেট্রো করিডরে জমা জল নিয়ে দুশ্চিন্তায় নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ বা এনকেডিএ।প্রোমোটার, ডেভলপার, ঠিকাদাররা যাতে এ ব্যাপারে সচেতন থাকেন, সে জন্যে এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তাঁদের নিয়ে মিটিং করেছেন। পাশাপাশি, নজরদারিতে নিজেদের কর্মী-সংখ্যাও বাড়িয়েছেন। এনকেডিএ’র এক কর্তা বলেন, ‘গত ৬ মাসে মাত্র তিন জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন নিউ টাউনে। তিন জনের ট্রাভেল হিস্ট্রি রয়েছে। তাঁরা জ্বর নিয়ে বাইরে থেকে এসেছিলেন। ভয়ের কিছু না থাকলেও আমরা সতর্ক রয়েছি।’
এনকেডিএ’র ভিসিএম (ভেক্টর কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট) টিমের এক আধিকারিক বলেন, ‘বৃষ্টিতে নতুন করে জল জমতে শুরু করেছে নিউ টাউনের মেট্রো করিডর এবং নির্মীয়মাণ বহুতলগুলিতে। আশঙ্কা, জমা জলের সূত্রেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। এ জন্যে বহুতল ও মেট্রো করিডরে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ড্রোনের সাহায্যে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে বহুতলের ছাদ, কার্নিশগুলিতে।’
এই মুহূর্তে নিউ টাউনে ৩০টি ব্লকে মোট ৬০টি আবাসন রয়েছে। তিনটি অ্যাকশন এরিয়া মিলিয়ে মোট হাউজহোল্ডের সংখ্যা ৩৩,৭০৩। সব মিলিয়ে ওই আবাসনগুলিতে ৭২ হাজার মানুষের বসবাস। আবার কর্মসূত্রে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নিউ টাউনে আসেন, থাকেন। আবাসনগুলিতে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করছেন ৭০ জন স্প্রেয়ার।
গত বছর এনকেডিএ এরিয়ায় ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যু না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছুঁয়েছিল। তাই শুধু এই বর্ষা নয়, গোটা বছর সতর্ক থাকছেন এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ। ভিসিটি টিমের কর্মীরা প্রতিদিন বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন কেউ জ্বর বা অন্য কোনও উপসর্গে ভুগছেন কিনা। এর পাশাপাশি কীটনাশক স্প্রে, ফগিং, জলাশয়গুলিতে গাপ্পি মাছও ছাড়ছেন এনকেডিএ’র ডেঙ্গি মোকাবিলার টিম।
তিনটি অ্যাকশন এরিয়ায় বেশ কয়েকটি ছোট নিকাশি খাল রয়েছে। সেখানেও বোটের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ভিসিটি টিমের পাশাপাশি ডেঙ্গি রুখতে ইঞ্জিনিয়ার সেকশনকেও কাজে লাগাচ্ছে এনকেডিএ। এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘নিউ টাউন জুড়ে একাধিক বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে পাইলিংয়ের গর্ত, রিজার্ভার এবং ছাদগুলিতেও বৃষ্টির জল জমছে। ঠিকা শ্রমিকরা যে সব লেবার হাটমেন্ট বা শ্রমিককুঠিতে থাকেন, সে রকম কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গির লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। ওই হাটমেন্টে থাকা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
অ্যাকশন এরিয়া ৩-এ একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার অনিল আগরওয়াল বলেন, ‘এনকেডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা বার বার লিফট রুম, চৌবাচ্চা, সেপটিক ট্যাঙ্ক, ছাদে যাতে জল না জমে সে দিকে খেয়াল রাখছি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে নিয়মিত।’