• বাইক-গাড়ির সংঘর্ষ, মারিশদায় মহিলা সহ মৃত ৪  
    বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক ও সংবাদদাতা, কাঁথি: বুধবার গভীর রাতে দীঘাগামী জাতীয় সড়কে মারিশদায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মারিশদা থানার খড়িপুকুরিয়ায় রাত দেড়টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দীঘাগামী পর্যটকদের প্রাইভেট গাড়ির সঙ্গে মোটরবাইকের সংঘর্ষ হয়। তাতে বাইকে থাকা তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে। প্রাইভেট গাড়িতে মোট সাতজন ছিলেন। ওই গাড়ির এক যাত্রীও মারা গিয়েছেন। চণ্ডীপুর থেকে কাঁথি পর্যন্ত দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়ক কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। ক্রমশ দুর্ঘটনা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। এনিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন ও পুলিস।


    নদীয়ার বাদকুল্লা থেকে পর্যটকদের প্রাইভেট গাড়িটি দীঘা যাচ্ছিল। চালক সহ সাতজন গাড়িতে ছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ খড়িপুকুরিয়া-কুমিরদা রাস্তা ধরে একটি বাইকে তিনজন যুবক দ্রুতগতিতে জাতীয় সড়কে ওঠেন। তখনই বাইকে সজোরে ধাক্কা মারে প্রাইভেট গাড়িটি। বাইকটি ছিটকে অনেকটা দূরে চলে যায়। তাতে ছিলেন অতনু মণ্ডল(২৪), বিশ্বজিৎ মণ্ডল(২৪) ও শুভঙ্কর জানা(২২)। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় প্রাইভেট গাড়িটিও বেপরোয়া গতিতে ছিল। বাইকে ধাক্কা মারার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেট গাড়িটি উল্টে নয়ানজুলিতে পড়ে। কোয়েল সিংহ(১৯) নামে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। এছাড়াও গাড়িতে থাকা অন্যান্যরা জখম হন। তাঁদের নিকটবর্তী খড়িপুকুরিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।


    বাইকে থাকা তিনজনের বাড়ি দেশপ্রাণ ব্লকের আমতলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়াঘাটা গ্রামে। শুনিয়া সংলগ্ন এই গ্রামের তিনজন তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অতনু ও বিশ্বজিৎ বিবাহিত। তাঁরা বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। অতনু একটি মদের দোকানের কর্মী। বিশ্বজিৎ আইসক্রিম বিক্রি করেন। তিনি ঘোড়াঘাটায় একটি মাংসের দোকান বানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই দোকান চালু হওয়ার কথা ছিল। সেই উপলক্ষ্যে তিন বন্ধু অত রাতে বাইকে চেপে খড়িপুকুরিয়া আসছিলেন। শুভঙ্কর পেশায় টোটোচালক। তিনজনই পরিবারের রোজগেরে সদস্য। তাঁদের মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। অতনু ও বিশ্বজিতের ছোট সন্তান রয়েছে। আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।


    বিশ্বজিতের বাবা তপন মণ্ডল বলেন, ছেলে একটি মাংসের দোকান খোলার সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল। বৃহস্পতিবার সেই দোকান খোলার কথা ছিল। সেই উপলক্ষ্যে তিন বন্ধু বাইকে বেরিয়েছিল। এক দুর্ঘটনায় সব শেষ। এভাবে ছেলেটা অকালে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। শুভঙ্করের বাবা শঙ্কর বলেন, ওরা তিনজন ভালো বন্ধু। পরস্পরের উপকারে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এক দুর্ঘটনায় তিনজনেই শেষ হয়ে গেল। 


    গত ১৬মে মারিশদা থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় নদীয়ার ভীমপুরের চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই দীঘা যাচ্ছিলেন। দীঘাগামী জাতীয় সড়কে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু, অনেকটা অংশে রাস্তা সম্প্রসারণ হয়নি। যেকারণে ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটছে। চণ্ডীপুর থেকে কাঁথি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের এই অংশ অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে গিয়েছে। ডিএসপি(ট্রাফিক-২) পবিত্রকুমার বারিক বলেন, বাইকের সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)