সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সই ও সিল জাল করে এফিডেভিট। এরপর সেই নথি দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন। যদিও আইনজীবী মারফত ঘটনাটি নজরে আসতেই বৃহস্পতিবার দুই ল-ক্লার্ককে গ্রেপ্তার করল রামপুরহাট থানার পুলিস। এই ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই দুই ল-ক্লার্কের নামে থানায় এফআইআর দায়ের করেন রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে। তিনি বলেন, ওই দুই অভিযুক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সই সিল জাল করে এফিডেভিট করায়। এফআইআর করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাসপোর্ট করার সময় এফিডেভিটের মাধ্যমে স্ব-স্বীকারোক্তি দিতে হয় যে, তাঁর নামে কোনও কেস নেই। সেই মতো এক ব্যক্তি এফিডেভিট করার জন্য আবেদন করতে মাড়গ্রামের চাঁদপাড়ার বাসিন্দা বিকাশচন্দ্র মণ্ডল ওরফে রবি মণ্ডলের শরণাপন্ন হন। এফিডেভিট হয়ে প্রশাসনিক স্তরে জমাও পড়ে যায়। সম্প্রতি সেই এফিডেভিট যাচাই করতে আদালতে আসেন এক ডিআইবি অফিসার। বিষয়টি নজরে আসে রামপুরহাট আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উৎপল মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, গত বছরের ১০ মে এফিডেভিট করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এফিডেভিট করা বন্ধ ছিল। সন্দেহ জোরালো হতেই বিষয়টিতে নজর দেওয়া হয়। দেখা যায়, সই জাল করা হয়েছে। পাশাপাশি যাঁর নামে এফিডেভিট, তিনি মুম্বইয়ে থাকেন। অথচ তাঁর নামে এফিডেভিট হয়ে গেল। এটা বড় জালিয়াতি। এরপরই বিষয়টি মহকুমা শাসককে লিখিতভাবে জানাই। ওই এফিডেভিটে সই রয়েছে ডেপুটি ম্যাজিস্টেট তথা ডেপুটি কালেকক্টর নাজিম আলি মুফতির। সেই সই ও তাঁর অফিসিয়াল স্ট্যাম্পও জাল করা হয়েছে। মুফতি সাহেব বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর যিনি এফিডেভিট করেছিলেন, তাঁকে মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে ডাকা হয়। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন ল-ক্লার্ক রবি মণ্ডলের কাছে করেছি। রবিকে ডাকা হলে সে বলে আমি ও অন্য একজন ল’ক্লার্ক মাড়গ্রামের বাসিন্দা সেন্টু শেখকে দিয়ে করিয়েছি। কিন্তু সেন্টুকে ডাকা হলেও সে আসতে চায়নি। এমনকী এসডিওর নাম করে ডাকা হলেও আসতে অস্বীকার করে। তিনদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলার পর মুফতি সাহেব রবি ও সেন্টুকে নিয়ে আসার জন্য মাড়গ্রাম থানাকে চিঠি দেন। সেই মতো এদিন ওই দু’জনকে তুলে এনে রামপুরহাট থানায় পৌঁছে দেয় মাড়গ্রাম থানার পুলিস। মুফতি সাহেব বলেন, ওরা একেবারে পার্সোনাল অফিস খুলে বসেছিল। স্ট্যাম্প পেপারে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের জাল সই, সিল দিয়ে এফিডেভিট করে দিচ্ছিল। অভিযুক্ত দু’জনেই ল’ক্লার্ক বলে দাবি করেছে।
যদিও বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি বলেন, রবি ল-ক্লার্ক বলে শুনেছি। ও জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে। সেন্টুকে চিনি না। এর আগেও এক আইনজীবীর সই জাল করে এফিডেভিট করা হয়েছিল। তৎকালীন এসডিওর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে প্রায় দু’মাস জেল খাটতে হয়েছিল। এই ধরনের অনৈতিক কাজের প্রতি আমাদের নজর রয়েছে। তারজন্যই এই বিষয়টি ধরা পড়ল। এক্ষেত্রে যিনি এফিডেভিট করেছেন, তিনিও সমান জালিয়াতি করেছেন। তিনি সশরীরে না এসেই এফিডেভিট করাচ্ছেন। এই ধবনের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ল-ক্লার্ক হোক বা আইনজীবী, এই কাজে কাউকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।