• পলশন্ডা গার্লস হাইস্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা
    বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, তেহট্ট: পলাশীপাড়া থানার পলশন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ আছে, ছাত্রী আছে, অথচ নেই স্থায়ী বা পার্শ্ব শিক্ষক। গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী ছেলেমেয়েরা ছাত্রীদের কার্যত বিনা বেতনেই লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। গ্রামবাসীরা স্থায়ী শিক্ষকের জন্য আবেদন জানালেও এখনও পর্যন্ত কোনও শিক্ষক আসেননি। এই ভাবে স্কুল চলছে শুরু হওয়ার দিন থেকে। হেলদোল নেই শিক্ষাদপ্তরের। 


    স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, পলশন্ডা সহ আশেপাশের এলাকার চাহিদা ছিল একটি বালিকা বিদ্যালয়ের। এলাকায় উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও ছিল না কোনও বালিকা বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন এই দাবি এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছিলেন। সেই দাবি পূরণ হয় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর। ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের হাত ধরে এই এলাকায় একটি জুনিয়র গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সময়ে এই স্কুল শুরু হয়েছিল মাত্র ৩৪ জন ছাত্রীকে নিয়ে। তখন ছয়জন শিক্ষকের পদ তৈরি হয়েছিল। তবে কোনও শিক্ষক এই স্কুলে ছিল না। এরপর আস্তে আস্তে এই স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালে এই স্কুলকে মাধ্যমিক পর্যন্ত করে রাজ্যের শিক্ষাদপ্তর। মাধ্যমিক অবধি হলেও স্কুলে কোনও শিক্ষক আসেননি। ২০২২ সালে এই স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত নেই কোনও স্থায়ী শিক্ষক। এমনকী কোনও পার্শ্ব শিক্ষকও নেই। মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য গ্রামবাসীরা গ্রামের উচ্চশিক্ষিত মেধাবী মেয়ে ও ছেলেদের ওই স্কুলে পড়াতে বলেন। সেই ভাবে এলাকার ছ’জন ছেলেমেয়ে এখন ওই ছাত্রীদের লেখাপড়া শেখান। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্কুলের অতিথি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন। 


    স্কুল সুত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্কুলে বর্তমান ছাত্রীর সংখ্যা ৫৩৬ জন। এমনকী যেহেতু স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে সেই জন্য এবার ৫৮ জন মাধ্যমিক পাশ করে ওই স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে ভুগছে ওই স্কুল। স্কুলে পড়ান মোকাদ্দেস হোসেন, সারজিনা খাতুন, শেলী বিশ্বাস, শ্রাবণী খাতুন, সেলিনা খাতুন, হাসিবুল শেখ। এঁরা কেউ ইংরেজি, কেউ ভূগোল, কেউ দর্শন, কেউ বাংলায় অনার্স শেষ করে বসে আছেন। তাঁরা নিজেদের গ্রামের প্রতি ভালোবাসা থেকে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখান। এঁদের কাউকে ১৫০০ আবার কাউকে ২০০০ টাকা দেওয়া হয়। ছাত্রীদের ভর্তির টাকা থেকে তা দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। ওই ছেলেমেয়েরা বলেন, আমরা শুধুমাত্র ভালোবেসে এই কাজ করি। যদি না করতাম তাহলে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যেতো। এলাকার বাসিন্দা চইনুদ্দিন শেখ বলেন, মানিকবাবুর চেষ্টায় এই স্কুল তৈরি হয়েছে। এখন আটজন শিক্ষকের পদ অনুমোদিত হলেও কোনও শিক্ষক নেই। আমরা এই সমস্যার কথা মানিকবাবুকে বলেছিলাম। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা গ্রামের মেধাবী ছেলেমেয়েদের অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরাই পড়াচ্ছেন। তাঁদের খুব সামান্য সাম্মানিক দেওয়া হলেও তাঁরা ভালোবেসে এই কাজ করছেন। 


    এই বিষয়ে এআই তেহট্ট মনোতোস বিশ্বাস বলেন, ওই স্কুলে আটজন শিক্ষকের পদ অনুমোদিত হয়েছে। সেই বিষয়টি উৎসশ্রী পোর্টালে তোলা আছে। এই সমস্ত বিষয়টি আমি উপর মহলে জানিয়েছি। তাঁরা দেখছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)