সীমান্ত এলাকার উন্নয়নেও কেন্দ্রের বঞ্চনা, কানাকড়ি মেলেনি চার বছর
বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: আবাস প্রকল্প, একশো দিনের কাজের পর এবার বর্ডার এরিয়া ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা। বিগত চার বছর ধরে বাংলার সীমান্তে উন্নয়নমূলক প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ রেখেছে দিল্লির বিজেপি সরকার। ফলে বাংলার সীমান্ত জেলায় উন্নয়নমূলক কাজ কার্যত স্তব্ধ।এর মধ্যে অন্যতম হল নদীয়া জেলা। ২০২০ সালের পর থেকে এই প্রজেক্টের জন্য টাকা আসেনি দিল্লি থেকে। তৎকালীন সময়ে বরাদ্দ করা টাকাতেই ঢিমেতালে কাজ চলছে বর্ডার এলাকায়। কেন্দ্রীয় বঞ্চনায় ক্ষোভ বাড়ছে সীমান্ত এলাকার মানুষের। বর্তমানে জেলাপিছু এই প্রজেক্টে বরাদ্দ কাজের টাকা শেষ হয়ে এসেছে। টাকা না পাঠানোর কারণে নতুন করে সীমান্তে কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেওয়া যাচ্ছে না।
নদীয়ার জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা আগে প্রতি বছর আসত। সেইমতো সীমান্তের উন্নয়নমূলক কাজের বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ হতো। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে এই প্রজেক্টের টাকা আসছে না।
রাজ্যে সীমান্ত জেলাগুলির মধ্যে নদীয়া অন্যতম। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের ভাগাভাগি রয়েছে। সীমান্তে একাধিক ব্লক রয়েছে। যেমন—করিমপুর-১, করিমপুর-২, কৃষ্ণগঞ্জ, তেহট্ট-১ ও চাপড়া। যেখানে বিগত চার বছরে এই প্রজেক্টের আওতায় ৫৩টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত চার বছরে নদীয়া জেলা এই প্রজেক্টের জন্য মাত্র ৭ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে তিন দফায় এই টাকা এসেছে। প্রথম দফায় ৬ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দফায় ৭৫ লক্ষ টাকা এসেছে। লোকসভা ভোটের আগে তৃতীয় বা শেষ দফার ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছে নদীয়া জেলা। এই টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৯২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৯৫ টাকা।
প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, লোকসভা ভোটের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ তৃতীয় দফার টাকা পাঠানো হয়। যেখানে করিমপুর-১ ও কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। তা দিয়ে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই টাকার অধিকাংশই খরচ হয়ে গিয়েছে।
একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে বারবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই দুই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যে এসে তদন্ত করে গিয়েছে দিল্লির প্রতিনিধি দল। কিন্তু প্রতিবারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। এবার সীমান্তের উন্নয়ন নিয়েও কেন্দ্র সরকার বঞ্চনার বিষয়টি সামনে এসেছে। টাকা না আসায় কাজ বন্ধ রয়েছে সীমান্তের ব্লকগুলিতে।
ভাইব্রেন্ট ভিলেজ প্রজেক্টের আওতায় সীমান্তকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। গোটা রাজ্যে প্রায় ৫৫টি ভাইব্রেন্ট ভিলেজ তৈরি করছে কেন্দ্র সরকার। তার মধ্যে কৃষ্ণগঞ্জের কাদিপুরে তার পাইলট প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের টাকা আটকে রেখে কীভাবে সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছ।