• মিড ডে মিল নেওয়ার লাইনে চেঁচামেচি, ছাত্রের গায়ে গরম খিচুড়ি, মুরারইয়ে বিক্ষোভ  
    বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: খিচুড়ি নেওয়ার লাইনে সহপাঠীদের সঙ্গে খুনসুঁটি থেকে চেঁচামেচি করছিল। এটাই ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের ‘অপরাধ’। তারই শাস্তিস্বরূপ ছাত্রের গায়ে গরম খিচুড়ি ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল মিড ডে মিলের রাঁধুনির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তর শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ছাত্রের পরিবার ও অন্যান্য অভিভাবকদের বিক্ষোভে উত্তাল হল মুরারই-১ ব্লকের গোড়শা পশ্চিম মুসলিমপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। নৃশংস এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন স্কুলে পঠনপাঠন স্বাভাবিক রেখে মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ করে দেন গ্রামবাসীরা। গোড়শা গ্রামের ওই ছাত্রের নাম মেরাজ শেখ। তার পিঠ ও ডান হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে।


    এদিকে বাড়ি গিয়ে ওই ছাত্র পরিবারের লোকজনকে ঘটনার কথা জানান। সোমবার স্কুল খুললে ওই রাঁধুনির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান অভিভাবকরা। মঙ্গল ও বুধবারও একই দাবি জানান তাঁরা। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বুধবার স্কুলে তালা ঝুলিয়ে মিড ডে মিল রান্না বন্ধ করে দেন গ্রামবাসীরা। এদিন ওই ছাত্রের পরিবার ও অন্যান্য অভিভাবকরা স্কুলে এসে নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি ওই কর্মীর শাস্তির দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। ছাত্রের মা আঙুরা বিবি বলেন, ওইদিন খিচুড়ি নেওয়ার লাইনে বাচ্চারা চিৎকার চেঁচোমেচি করছিল। সেইসময় রাঁধুনি আমার ছেলের গায়ে গরম খিচুড়ি ঢেলে দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরই প্রতিবাদে মিড ডে মিল রান্না বন্ধ রেখেছেন গ্রামবাসীরা। ছেলে জ্বালায় ঘুমাতে পারছে না। ছেলের কষ্ট দেখে চোখে জল চলে আসছে। আমি রাঁধুনির শাস্তি চাই। 


    গ্রামরাসীরা বলেন, শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। কীভাবে একজন মহিলা এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটাতে পারে? তিনিও তো মা। এর আগেও এই কেন্দ্রে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই ঘটনা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানায়নি রাঁধুনি। এই কেন্দ্রের খাবারও অত্যন্ত নিম্নমানের। অবিলম্বে ওই রাঁধুনির শাস্তির পাশাপাশি বদলির দাবিতে মিডডে মিল রান্না বন্ধ রেখে বিক্ষোভে শামিল হয়েছি। 


    যদিও রাঁধুনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওইদিন একটি বাচ্চা থালায় খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় অন্য বাচ্চার গায়ে লেগে ঠেলাঠেলিতে মেরাজের গায়ে গরম খিচুড়ি পড়ে যায়। সেই সময় আমি মেরাজের গায়ে দুই বালতি জল ঢেলে বাড়ি পাঠিয়ে দিই। কিন্তু ভাবতে পারেনি এত বাড়বাড়ি হবে। ফোস্কা পড়ে যাবে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাইনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকা চন্দনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, গরম খিচুড়ি ঢেলে দিয়েছে কি না জানি না। তবে রাঁধুনি আমাকে কিছুই জানায়নি। জানালে ছাত্রের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতাম। এখন মীমাংসা করতে বললেও অভিভাকরা রাজি হচ্ছেন না। তাঁরা মিড ডে মিলও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিডিও বীরেন্দর সিং বলেন, যেভাবেই খিচুড়ি পড়ুক, ওই ছাত্রকে দ্রুত হাসপাতালে বা অভিভাবকদের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তাহলে এত ক্ষোভ হতো না। রাঁধুনিও স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানায়নি। স্কুলের কাছে থেকে রিপোর্ট চেয়েছি। ওই রাঁধুনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)