সালারে মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো দেড় লক্ষ টাকা সহ সর্বস্ব পুড়ে ছাই
বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, কান্দি: কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। চায়ের দোকান চালিয়ে তিল তিল করে অর্থ জমিয়েছিলেন। সাধ ছিল মেয়ের বিয়েটা ভালোভাবে দেবেন। যদিও মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো দেড় লক্ষ টাকা এক নিমেষে পুড়ে ছাই। এমনকী বিয়ের গয়না থেকে ঘরের আসবাবপত্র সর্বস্ব শেষ। সামান্য মোবাইলের চার্জার ফেটে ঘরে আগুন। তাতেই গোটা বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে সর্বস্বান্ত সালারের দুঃস্থ মল্লিক পরিবার। মর্মান্তিক এই ঘটনায় মনমরা প্রতিবেশীরাও।
সালারের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা আলিম মল্লিক একজন শান্ত ও ভালো মানুষ বলেই এলাকায় পরিচিত। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে আগেই হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে শুকরানার বিয়ে ঠিক করেছিলেন আশ্বিন মাসে। ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালান আলিম সাহেব। অন্য মেয়েদের বিয়েতে তেমন খরচ করতে পারেননি। তাই ছোট মেয়ের বিয়ে ধুমধামে দেওয়ার বাসনা ছিল। সেই কারণে প্রায় আড়াই বছরের চেষ্টায় মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিলেন। মাস দুয়েক পর জেলার সারগাছিতে পাত্রস্থ করার দিনক্ষণও স্থির হয়ে যায়। কিন্তু বুধবার দুপুরে বাড়িতে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। বাড়ি বলতে মাটির দেওয়াল, খড়ের চালার এক চিলতে বাসস্থান। দুপুরে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতিবেশীদের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেইসময় চার্জে দেওয়া মোবাইলের চার্জার ফেটে আগুন লাগে ঘরে। দীর্ঘক্ষণ পর এক প্রতিবেশী আগুন লাগার ঘটনাটি লক্ষ্য করে চিৎকার শুরু করেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভান।
এরপর সন্ধ্যায় ঘর থেকে পুড়ে যাওয়া সামগ্রী বের করতে গেলে পরিবারের সকলের মুর্ছা যাওয়ার জোগাড়। ঘরে কিছুই আস্ত নেই। কাপড় থেকে রান্নার চাল, দামি সামগ্রী থেকে মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো দেড় লক্ষ টাকা পুড়ে ছাই। এমনকী প্রায় সাড়ে তিন ভরি সোনার গয়না তৈরি করা ছিল। সেগুলিও আগুনে পুড়ে রং চটে গিয়েছে। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার সহ প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশী জঙ্গিলাল মল্লিক বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরাও নিজেদের ঠিক রাখতে পারিনি। কঠিন পরিশ্রম করে মেয়ের বিয়ের জন্য ওই টাকা জোগাড় করেছিল। সব নিমেষে শেষ হয়ে গেল।
এদিকে আগুন লাগার কথা ছোট মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়িতেও জানানো হয়। পরিবারের কর্তা আলিম সাহেব কান্নভরা গলায় মোবাইলে বলে ওঠেন, মেয়ের বিয়ে দু’মাস পিছিয়ে দিতে হবে। আমার এখন আর বিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই।
আলিম সাহেব বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে চায়ের দোকান চালিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিলাম। এখন ফের মেয়ের বিয়ের টাকা কীভাবে জোগাড় করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। আলিম সাহেবের স্ত্রী ফরিদা বিবি বলেন, আগুনে পোশাক পর্যন্ত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এখন প্রতিবেশীদের কাপড় চেয়ে পরেছি।