সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: গাছে বেঁধে, মাথায় রড দিয়ে মেরে ময়নাগুড়িতে খুন করা হল এক কংগ্রেস কর্মীকে। অভিযোগের তীর, তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। মৃতের নাম মানিক রায় (৪৫)। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ি ব্লকের খাগড়াবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হঠাৎ কলোনিতে। ঘটনায় ১১ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে ময়নাগুড়ি থানায়। নির্দিষ্ট নামে অভিযোগ দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিস পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে, স্বামীর মৃত্যুতে ১০ এবং ১৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে শোকোস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন মৃত ব্যক্তির স্ত্রী। তদন্তে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিস বাঁশ, কাঠের বাটাম, বাইকের সকারের রড, দড়ি উদ্ধার করেছে। থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছে। ধৃতরা হল নারায়ণ রায়, রাজকুমার রায়, দিলীপ রায়, মিঠুন দাস এবং নারায়ণ রায়। পাঁচবছরের পুরনো শত্রুতার জেরে এই ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে জানা গিয়েছে। মৃত মানিকের স্ত্রী স্বপ্না রায় বৃহস্পতিবার বলেন, হঠাৎ কলোনিতে আমাদের যেখানে বাড়ি তার পাশেই জর্দা নদী। নদী থেকে বালি তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে আমাদের ঝামেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে মিথ্যা দুর্নাম দিয়ে স্বামীকে ফাঁসানো হয়। গ্রামে আমাদের থাকতে দেওয়া হবে না বলেও নিয়মিত হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজন জড়িত ছিল। পরবর্তীতে ওদের অত্যাচারে দুই সন্তান নিয়ে আমরা শিলিগুড়ি চলে যাই। পাঁচবছর পর গত রবিবার হঠাৎ কলোনির বাড়িতে আসি। আমরা স্থির করি এখানেই থাকব। আমরা ঘরে ফেরায় ফের দু’দিন ধরে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। বুধবার রাতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাড়িতে প্রথমে ঢিল মারতে শুরু করে। এরপর ৩০-৩৫ জন বাড়িঘর ভাঙচুর করে। ঘর থেকে টেনে বের করে স্বামীকে। পরে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটায়। আমার ১৩ বছরের ছেলে এটা দেখে থানার দিকে রওনা দেয়। পরে আমাকেও ওরা মারতে আসে। ছোট ছেলেকে নিয়ে আমিও থানার উদ্দেশ্যে রওনা হই টোটোয় চেপে। পুলিস এসে স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যায় ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় জলপাইগুড়ি। রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি পুলিসের কাছে রেখেছি। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার মানিক রায়ের দেহ নিয়ে আসা হয় কংগ্রেসের ময়নাগুড়ির পার্টি অফিসে। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, যা হয়েছে সেটা সভ্যসমাজে হতে পারে না। ঘটনায় তৃণমূল জড়িত। দোষীরা সকলে গ্রেপ্তার না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।
ময়নাগুড়ি-১ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মনোজ রায় বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। ময়নাগুড়িতে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন। প্রচারে আসতে রাজনীতি করছে ওরা।