জমি কেলেঙ্কারি: এবার প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিসের
বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, নকশালবাড়ি: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটো! জমি মামলায় নকশালবাড়িতে ধৃত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে বামফ্রন্ট জমানার কেলেঙ্কারি হাতে পেয়েছে পুলিস। অভিযোগ, সেই সময়ই জাল পাট্টার মাধ্যমে জমি দখলে মদত দিয়েছেন সিপিএম ও কংগ্রেসের রাঘব বোয়ালরা। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন এক কর্মাধ্যক্ষের বয়ান নথিভুক্ত করেছে পুলিস। তাদের স্ক্যানারে বামফ্রন্ট জমানার কয়েকজন নেতা ও ভূমিদপ্তরের আধিকারিক রয়েছেন। অভিযুক্তদের একাংশ অবশ্য এখন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায়। এনিয়ে এলাকার রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে।
টানা চারদিন ধরে নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ধৃত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আসরাফ আনসারি ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে পুলিস চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে। পুলিস সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে ধৃত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বাবার নামে সেবদেল্লা মৌজায় দুই একরের বেশি জমির পাট্টা হয়। সেটা বামফ্রন্ট জমানা। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েত সমিতি ছিল বামফ্রন্টের কব্জায়। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সমিতি দখল করে কংগ্রেস। অভিযোগ, ওই সময়কালেই আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে ধৃতের বাবার নামে পাট্টা প্রদান করা হয়। অন্যায়ভাবে ওই পাট্টা প্রদানের নেপথ্যে সেই সময়ের কয়েকজন কংগ্রেস ও সিপিএম নেতা রয়েছেন বলে অভিযোগ। এঁদের সঙ্গে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের একাংশও জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ সামনে আসে। পুলিস অফিসাররা বলেন, ওই জাল পাট্টা নিয়ে তদন্ত চলছে। কয়েকজনের ভূমিকা আতশকাচের নীচে। সেই তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতা সহ সরকারি দপ্তরের আধিকারিকরাও রয়েছেন। ইতিমধ্যে একজনের বয়ান নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওই নেতাদের মধ্যে একজনের বয়ান নেয় নকশালবাড়ি থানার পুলিস। ওই নেতা বর্তমানে তৃণমূলে আছেন। একসময় কংগ্রেস করতেন। তিনি বলেন, আমি যখন কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম, তখন মন্টুদের ওই পাট্টা ইস্যু করিনি। তাতে আমার স্বাক্ষরও নেই। সেখানে ‘এ’ দিয়ে স্বাক্ষর রয়েছে। প্রায় ছ’মাস আগে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং পুলিসকে বিষয়টি জানিয়েছি। এদিনও পুলিসকে সেই কথাই জানিয়েছি।
গত সোমবার মন্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। এরপরই জমির বেআইনি কারবার নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ বলেন, লাঙল যাঁর, জমি তাঁর— এই স্লোগানেই জমির বেআইনি কারবারের সূচনা হয় বামফ্রন্ট জমানায়। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী (সমতল) পাপিয়া ঘোষ বলেন, এখানে জমির বেআইনি কারবারের বীজ বপণ হয়েছে বামফ্রন্ট জমানাতেই।
সিপিএম নেতারা অবশ্য এই বক্তব্য উড়িয় দিতে পারেননি। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ঝরেন রায় বলেন, বামফ্রন্ট জমানায় পাট্টা নিয়ে অনিয়ম হতে পারে। কিন্তু, এখনকার মতো জমি দখল করে বেআইনি কারবার হতো না। ধৃত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বাবার নামে ইস্যু হওয়া ওই পাট্টা নিয়ে আমরাই প্রথম আন্দোলনে নামি।