দরিদ্র পরিবারের ৩ কিশোরের সুযোগ ইস্টবেঙ্গলে, পাশে দাঁড়ালেন পুলিশকাকুরা
এই সময় | ২৬ জুলাই ২০২৪
বাংলার বিভিন্ন গ্রামে লুকিয়ে রয়েছে বহু প্রতিভা। গ্রামগঞ্জ থেকে বহু খেলেয়াড়কেও উঠে আসতে দেখা যায়। সেই সমস্ত প্রতিভা যেন হারিয়ে না যায়, তাই এবার বিশেষ উদ্যোগ পুলিশ কর্মীদের। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সুযোগ পেয়েছে হুগলির বৈঁচিগ্রামের ৩ কিশোর। আর তাদের হাতে ফুটবলের যাবতীয় সরঞ্জাম তুলে দিলেন বৈঁচি ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা।ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে পাণ্ডুয়ার বৈঁচিগ্রামের তিন কিশোর। দীপাঞ্জন টুডু সুযোগ পেয়েছে অনূর্ধ্ব ১৫ দলে, আর অনূর্ধ্ব ১৩ দলে নাম উঠেছে চাঁদ ক্ষেত্রপাল ও শিশির সরকারের। তারা প্রত্যেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে খেলা। দরিদ্র পরিবারের এইসব প্রতিভাধর ছেলেরা আগামীদিনে যাতে ফুটবল খেলেই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারে তার জন্য এবার পাশে দাঁড়ালেন বৈঁচি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজির উদ্দিন আলি। কয়েকজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে এই ৩ ফুটবলারের বাড়ি গিয়ে তাদের হাতে তুলে দিলেন বুট, ফুটবল, জার্সি, প্যান্ট, সহ খেলার কিট। পাশাপাশি যে কোনও প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন পুলিশকর্মীরা।
এই বিষয়ে দীপাঞ্জন বলে, 'বাবা ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল আমাকে ফুটবলার তৈরি করার। ছোট থেকেই বাবা আমাকে মাঠে নিয়ে গিয়ে ফুটবল প্র্যাকটিস করাতেন। তখন থেকেই ফুটবল খেলতে ভালো লাগে। বর্তমানে বেলঘরিয়াতে একমাস ধরে ফুটবলের ট্রায়াল চলে। সেখানে দু-তিন ঘণ্টা করে প্র্যাকটিস করতে হতো। পরবর্তীতে মাঠ পরিবর্তন করে ডায়মন্ড হারবারের কাছে মাঠে প্র্যাকটিস করতাম। সেখান থেকে ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব ১৫ দলে খেলার সুযোগ পাই।'
আবার চাঁদ বলে, 'আমি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৩ দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি। বাড়িতে এসে পুলিশকাকুরা আমাদের সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে গর্বের। আমরা চাই আগামীদিনে বড় ফুটবলার হতে। রোনান্ডো আমার কাছে গুরুদেব, তাঁর খেলা, গোল করা, সেলিব্রেশন সবকিছুই আমার ভালো লাগে।' এদিকে শিশির বলে, 'ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলতে যাচ্ছি আমরা। সেখানে ম্যাচ ও প্র্যাকটিস করানো হয়। ওডিশাতেও খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা লিগ টপার হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে যাই। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। যা রোজগার হয় কোনওরকমে সংসার চলে। বাবার উপার্জনে খেলা চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। পুলিশকাকুরা এসে আমাদের জুতো, বল, ব্যাগ দিয়ে গিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে গর্বের। কোনওরকম অসুবিধা হলে তাঁদের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইব। তবে আমরাও চেষ্টা করব যাতে আগামীদিনে আমরা এই গ্রামের নাম উজ্জ্বল করতে পারি।'
শিশির চাঁদদের কোচ অমিতাভ দাস স্থানীয় বৈঁচি মাঠে প্র্যাকটিস করান। তিনি জানান, গ্রাম থেকে ছেলেরা খুবই কষ্ট করে কলকাতার মাঠে খেলতে যায়। তাদের চেষ্টা আছে আগামীদিনে বড় ক্লাবে খেলবে। তেমন ভাবেই নিজেদের তৈরি করছে। অভাব আছে, কিন্তু অভাবকে জয় করেই এগিয়ে যেতে হবে। বলতে গেলে একের পর এক ফুটবলার গড়ার চেষ্টায় নিরলশ পরিশ্রম করে চলেছেন তিনিও।