• বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে নিজেই ফতুর কলকাতা পুরসভা
    এই সময় | ২৬ জুলাই ২০২৪
  • গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে শহরে অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে বেআইনি ভাবে কেউ বাড়ি বানালেই সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে দিচ্ছে পুরসভা। এই কাজের জন্য চারটি বেসরকারি এজেন্সিকে নিয়োগ করা হয়েছে। পুরসভা থেকে নির্দেশ পেলেই তারা দলবল নিয়ে হাজির হচ্ছে বাড়ি ভাঙতে। এই কাজের জন্য মোটা টাকা বিলও জমা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। যত বেআইনি বাড়ি ভাঙা হচ্ছে বিলের বহর ততই বাড়ছে। আর সেই বিল মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে পুরসভাকে।সূত্রের খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৯৫টি বেআইনি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। এ জন্য পুরসভার কাছ থেকে ঠিকাদার এজেন্সিগুলির বকেয়া প্রায় ৫ কোটি টাকা। মাসের পর মাস সেই টাকা না মেলায় বাড়ি ভাঙার কাজে নিযুক্ত বেসরকারি এজেন্সিগুলি পড়েছে বিপাকে। টাকার জন্য রোজই তারা দরবার করছেন পুর আধিকারিকদের কাছে। কেউ কেউ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলেও দাবি পুর ইঞ্জিনিয়ারদের।

    কলকাতা পুর আইনে বলা হয়েছে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে যা টাকা খরচ হবে সেটা সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককেই দিতে হবে। ফলে কোনও বেআইনি বাড়ি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে মালিকদের বিলও পাঠিয়ে দিচ্ছে বিল্ডিং বিভাগ। ১৫ দিনের মধ্যে বিল না মেটালে সম্পত্তিকরের সঙ্গে তা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে জমির মালিকরা ফ্যাসাদে পড়লেও অভিযুক্ত প্রোমোটারদের গায়ে আঁচ লাগছে না বলে মনে করছেন বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা।

    বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, কলকাতায় সারা বছর যত বাড়ি তৈরি হয় তার সিংহভাগটাই প্রোমোটাররা বানান। নামে প্রোমোটার হলে আদতে তারা ডেভলপার। নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে তাঁরা অন্যের মালিকানাধীন জমিতে বাড়ি বানিয়ে থাকেন। ফলে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার যাবতীয় দায়ভার জমির মালিককেই বহন করতে হয়। পুলিশ কেস হলেও তাঁদের নামেই হয়। অথচ, যাঁরা বেআইনি বাড়ি বানাচ্ছেন সেই সব অসাধু ডেভলপাররা রয়ে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

    অন্যদিকে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙার পরে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাই জমির মালিকও সহজে টাকা মেটাতে চান না। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার পরে সেগুলো কার্যত হানাবাড়ির চেহারা নেয়। এমনকী, বেআইনি বাড়ি ভাঙার পরে তার আবর্জনাও সরাতে হয় পুরসভাকেই। সেই খরচও বহন করতে হয় তাদের।

    পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা জানান, এর আগে যখন বেআইনি বাড়ি হতো তখন শুধুমাত্র ছাদ ফুটো করে দিতেন ডিমোলিশন স্কোয়াডের লোকেরা। সেই ফুটো আবার মেরামত করা যেত। কিন্তু এখন মেশিনের সাহায্যে ছাদ কেটে পুরোপুরি নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা নতুন করে আর মেরামত করা যায় না। এর ফলে বাড়ি ভাঙার খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

    ভাবা হয়েছিল, বেআইনি বাড়ি ভাঙার অভিযান শুরু হলে শহরে বিল্ডিং প্ল্যান মেনে বাড়ি করার প্রবণতা বাড়বে। তাতে বিল্ডিং ফি আদায় বাড়বে। বাস্তবে সেটাও হয়নি। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ছোট বাড়ির ক্ষেত্রে, ঠিকা জমি কিংবা কলোনিতে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে আমরা এখন অনেক ছাড় দিচ্ছি। তার পরেও কেউ যদি বেআইনি বাড়ি বানায় আমরা সেটা ভেঙে দেব। এ নিয়ে কোনও সমঝোতা করা হবে না।’
  • Link to this news (এই সময়)