এই সময়, শিলিগুড়ি: আচমকাই পাহাড়ের দুই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করে দিলেন জিটিএ চিফ তথা ভারতীয় প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা অনীত থাপা। বৃহস্পতিবার অনীত থাপা এক বিবৃতিতে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তাঁরা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এবং পাহাড়ে কোনও রকমের অশান্তি হলে দুই জেলাশাসকই দায়ী থাকবেন।মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, অনীত থাপার দুই জেলাশাসকের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভের কারণ, সরকারি জমি উদ্ধারে দুই জেলাশাসকের তৎপরতা। সম্প্রতি পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা প্রশাসন জবরদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি উদ্ধারে নেমেছে। শিলিগুড়ির কাছে পানিঘাটায় সম্প্রতি দার্জিলিং জেলা প্রশাসন কয়েক বিঘা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়।
একই ঘটনা ঘটে কালিম্পং জেলার পনবুতে ইয়াংমাকুং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানেও প্রদীপ ভূজেল নামে এক ব্যক্তি সরকারি জমি দখল করে বাড়ি তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। এই ব্যাপারে আদালতে দায়ের করা মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় কালিম্পং জেলা প্রশাসনের পক্ষে যায়। তার পরেই প্রদীপ ভূজেলের বাড়ির একাংশ ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
জবরদখল সরিয়ে সরকারি জমি উদ্ধারের এমন ঘটনা পাহাড়ের আরও কয়েকটি এলাকায় ঘটেছে। পাহাড়ে সরকারি জমি দখল অতি সাধারণ ঘটনা। বন দপ্তর, সিঙ্কোনা বাগান রেল এবং অন্যত্র সরকারি জমি দখল করার ঘটনা ভূরিভূরি। ফলে প্রশাসনিক এই তৎপরতার জেরে পাহাড়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়।
অন্যদিকে, জিটিএ প্রধান হিসাবে এই ব্যাপারে দুই জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর পরিবর্তে সরাসরি অনীত থাপার এমন বিবৃতিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি পাহাড়ে রাজনীতির সমীকরণ বদলে যাচ্ছে! তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কি দূরত্ব বাড়ছে?
এমন জল্পনার কারণ, ২০১২ সালে বিমল গুরুং জিটিএ চিফ হওয়ার পরেই দার্জিলিংয়ের তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তার পরেই তৃণমূলের সঙ্গে বিমল গুরুংদের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। জল্পনায় ঘি ঢেলেছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত।
এ দিন তিনিও একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘ভূমি সংস্কার দপ্তর জিটিএর অধীন। আমরা জিটিএকে সমর্থন না-করলেও পাহাড়ের মানুষের জমির অধিকার রাজ্য সরকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে মেনে নেওয়া হবে না।’ এ দিন অনীত থাপাও কার্যত একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে জিটিএ রয়েছে। আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করছি। জবরদখল জমি পুনরুদ্ধারের আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’
তবে এই ব্যাপারে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল কিংবা কালিম্পংয়ের জেলাশাসক সুব্রহ্মণীয় টি কোনও মন্তব্য করেননি। দুই জেলারই প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনের জন্য জমি খুঁজে বার করা।
প্রায় ২৩ বছর পরে পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয় গত বছর। কিন্তু এখনও বহু গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব ভবন নেই। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তর তৈরির জন্য জমি চেয়েছেন। সেই জমির ব্যবস্থা করতেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জবর দখল হটানোর কাজ শুরু হয়।