এই সময়, বর্ধমান: ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল! ২০ বছর পুরোনো জিপ এখন ভোলবদলে বোলেরো। শুধু তাই নয়, মহিন্দ্রার লোগোও রয়েছে তাতে। কিন্তু নেই কোনও ইন্সুরেন্স, পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল বা ফিট সার্টিফিকেট। অথচ গাড়িটির সামনের দুই জায়গায় এবং পিছনের দরজার কাচের উপরে লাল রঙে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’।কারণ, গাড়িটি জামালপুর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের। ব্যবহার করেন বিডিও অফিসের কর্মীরা। বিতর্ক মেটাতে তড়িঘড়ি বিডিও অফিস ও পরিবহণ দপ্তরের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক। গাড়ির হালহকিকত নিয়ে বিডিও অফিসের কর্মীরা মুখে কুলুপ আঁটলেও গাড়ির চালক অনিল মুর্মু বলেন, ‘জিপ গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন বদল করা হয়েছিল। তৎকালীন বিডিও সাহেবের সময়ে এ সব করা হয়। আমার পক্ষে এর থেকে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’
জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে জামালপুর বিডিও অফিসে দু’টি জিপ গাড়ি ব্যবহার করা হতো। গাড়ি দু’টির নম্বর ডব্লিউজিজে ৩১৩৫ ও ডব্লিউজিজে ২৫৮৫। প্রথম গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় বিডিও কার্যালয় চত্বরে পড়ে রয়েছে। অন্য গাড়িটি মডিফাই করে বোলেরোতে পরিণত করা হয়েছে পূর্বতন বিডিও সুব্রত মল্লিকের সময়ে। গাড়ির বডি পাল্টে দিলেও নম্বরপ্লেট (ডব্লিউজিজে ২৫৮৫) একই রয়েছে। আর এর জেরেই ধরা পড়েছে কারচুপি।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর জানাচ্ছে, বোলেরো বাজারে আসার সময়ে নতুন গাড়ির নম্বরপ্লেটে ডব্লিউজিজে-র মতো নম্বর দেওয়া হতো না। তখন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ডব্লিউবি ও সংশ্লিষ্ট আরটিও-র কোড নম্বর ব্যবহার চালু হয়ে গিয়েছিল। তাই ডব্লিউজিজে ২৫৮৫ নম্বরের গাড়িটি আর যাই হোক বোলেরো নয়।
জেলা পরিবহণ আধিকারিক গোবিন্দ নন্দী বলেন, ‘গাড়ির লাইফটাইম শেষ হলে ফের সেই গাড়ি চালাতে গেলে পরিবহণ দপ্তরের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। ইঞ্জিন বা চেসিস নম্বরের পরিবর্তন করতে গেলেও অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে খোঁজ নিতে হবে। তবে ডব্লিউজেজি ২৫৮৫ নম্বরের গাড়িটির কোনও তথ্য পরিবহণ দপ্তরে নেই। আমরা বিডিও দপ্তরের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি।’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে জামালপুরের প্রাক্তন বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘আমি এমন কোনও কাজ করিনি। আমার নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে।’ বর্তমান বিডিও পার্থসারথী দে-র বক্তব্য, ‘কিছুদিন আগে আমি এই দপ্তরের দায়িত্বে এসেছি। গাড়িটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’
বিষয়টি ইতিমধ্যে কানে এসেছে জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ারের। তিনি বলেন, ‘বিডিও অফিস ও পরিবহণ দপ্তরের কাছে সবটা জানতে চেয়েছি। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’