সৈকত মাইতি, তমলুক: রাতে ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে রেলের ফুটওভার ব্রিজের উপর এক কলেজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল মেচেদায়। বৃহস্পতিবার রাতে মেচেদা স্টেশনের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ, মেয়েকে বাঁচাতে এসে আক্রান্ত হয়েছে কলেজছাত্রীর মা-ও। এই ঘটনায় রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরা মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মেচেদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা স্নাতক উত্তীর্ণ এক কলেজ ছাত্রী। গ্রাফিক্স ডিজাইনের অ্যানিমেশন বিষয় নিয়ে পড়াশুনোর তাগিদে সম্প্রতি খোঁজখবর শুরু করেছিলেন। সেই সূত্রে বৃহস্পতিবার মাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার একটি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য গিয়েছিলেন। রাত প্রায় দশটা দশ মিনিট নাগাদ লোকাল ট্রেনে চড়ে হাওড়া থেকে মা ও মেয়ে মেচেদা স্টেশনে এসে নামেন। এরপর সেখান থেকে নতুন ফুট ওভার ব্রিজে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। দাবি, রাতের ট্রেন হওয়ার দরুণ অপেক্ষাকৃতভাবে স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিল। এমন অবস্থায় রেলের উদ্বোধন করা নতুন ওভারব্রিজের ওপর কলেজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি আশঙ্কা রেলের ওভার ব্রিজের উপর ওই কলেজ ছাত্রীকে টানাটানি শুরু করে। মেয়ের চিৎকারে ছুটে আসেন মা। কিন্তু শ্লীলতাহানিতে বাধা দিতে এসে তিনিও আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। মা ও মেয়ের চিৎকারে ঘটনাস্থল ছেড়ে চম্পট দেয় অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তি।
এদিকে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। প্রশ্ন উঠেছে রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে। ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার পাঁশকুড়া জিআরপি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন নিগৃহীতা ওই কলেজ ছাত্রী। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই কলেজ ছাত্রীর পরিবার। যদিও এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। প্রসঙ্গত, মেচেদা রেল স্টেশনটিতে সংকীর্ণ এবং বেহাল দশার জেরে দীর্ঘদিনের ফুট ওভারব্রিজের উপর দিয়েই ঝুঁকির পারাপার চলছিল নিত্যযাত্রীদের। বিষয়টি নিয়ে তাই সংস্কারের দাবি জানিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় যাত্রী পরিবহণ কমিটি থেকে শুরু করে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
অবশেষে দীর্ঘদিনের দাবি মেনে প্রায় বছর দুয়েক পর নতুন করে একটি আধুনিক মানের ফুট ওভারব্রিজ গড়ে তোলে রেল কর্তৃপক্ষ। গত মার্চে কোটি টাকা ব্যয়ে অমৃত ভারত স্টেশনের পাশাপাশি মেচেদার ওভারব্রিজটিও ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছে। নতুন এই ব্রিজটি সম্পূর্ণরূপে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যক্ষেত্রে নতুন এই ফুট ওভারব্রিজের নিরাপত্তায় কোন সিসিটিভি লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ। আর তাতেই যেকোনও ধরনের অপরাধমূলক কাজে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে রেল পুলিশ।