• বৃষ্টির ঘাটতি, পাট পচাতে বিশেষ সার কৃষিদপ্তরের
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বর্ষার মরশুমে বৃষ্টির ব্যাপক ঘাটতি নদীয়া জেলায়। জুলাই মাসে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে এই জেলাতেই। বৃষ্টির ঘাটতিতে মাথায় হাত পাট চাষিদের। নদীয়া জেলায় স্বাভাবিকের থেকে ৪৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। নদী, নালা, পুকুর, জলাশয়ের জল শুকিয়ে গিয়েছে। জলের অভাবে পাট পচাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। যার জেরে গতবছরের মতো এবছরও পাটের ফলনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাউডার জাতীয় সার বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। এর ফলে চাষিরা অল্প জলেই দ্রুত পাট পচাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, পাটের গুণগতমানও বজায় থাকবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে এই সামগ্রী দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। 

    কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ক্রিজেফ সোনা ও নিনফেট সাথী চাষিদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। পাট চাষিরা ব্লক অফিসে এসে এই সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে চাষিরা দ্রুত পাট পচাতে পারবেন। পাটের গুণগতমান ভালো থাকবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই পাটে পচন ধরবে। 

    নদীয়া জেলার অন্যতম ফসল হল পাট। জেলার প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয় প্রতিবছর। বিগত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির অভাবের কারণে পাট চাষ ব্যাপকভাবে মার খাচ্ছে। এতদিন পাট বাংলা শস্য বিমার আওতায় ছিল না। যার ফলে পাট চাষে ক্ষতি হলেও টাকা পেতেন না চাষিরা। তবে চলতি বছর থেকে বিমার আওতায় পাটকে ঢোকানো হয়েছে। যা অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে চাষিদের। 

    স্বাভাবিকের থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কম বৃষ্টি হলে আবহাওয়ার পরিভাষায় তা ঘাটতি বলে ধরা হয় না। কিন্তু নদীয়া জেলায় বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। জুলাই মাসে নদীয়া ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে স্বাভাবিকের থেকে ৪২ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।  অগত্যা পাট পচানোর জন্য পর্যাপ্ত জল পেতে সমস্যা হচ্ছে নদীয়ার চাষিদের। কালীগঞ্জের চাষি জামাল মণ্ডল বলেন, প্রতিবছর পাট চাষি করি। কিন্তু এবার বৃষ্টির ঘাটতি অত্যধিক। পাট পচানোর জায়গায় পাচ্ছি না। 

    এই সমস্যার সমাধান করতে কৃষিদপ্তর চাষিদের জমির মাঝখানে গর্ত করে কৃত্রিম পুকুর বানাতে বলছে। যার নাম ইন সিটু জেটি রিটিং ট্যাঙ্ক। সেখানে অল্প পরিমাণ জল দিয়ে পাট ফেলে তাতে ক্রাইজাফ সোনা ও নিষফেট সাথী প্রয়োগ করতে বলা হচ্ছে। এই সার বা ক্রাইজাফ সোনাতে পাট পচানোর ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর সঙ্গে থাকা নিনফিট সাথী পাট পচানোর এই ব্যাকটেরিয়াকে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাটের রঙও সোনালি রাখে। 

    কৃষি বিশেষজ্ঞের কথায়, সাধারণ গ্রাম বাংলার কলাগাছ ও কাদা দিয়ে পাট পচানো হয়। কলাগাছের ট্যানিক অ্যাসিড পাট পচাতে সাহায্য করে। কিন্তু কাদা মাটি দিয়ে পচালে পাটের রং নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর পরিবর্তে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে পাট পচাতে বলা হচ্ছে চাষিদের। এক বিঘা জমির পাটের জন্য এক প্যাকেটে এই পাউডারই যথেষ্ট। ( নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)