এই সময়: সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। শোকেও সচল রইলো কলকাতা হাইকোর্ট! গত চারদিনের শোক-ছুটি শুক্রবারও জারি থাকবে ভেবে যে সব আইনজীবীরা এ দিন হাইকোর্টমুখো হননি, তাঁরা ‘এপ্রিল ফুল’ হয়েছেন। যদিও আগের ঘোষণা মতো এ দিন সকাল সাড়ে দশটায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মৃতদেহ আনা হয় হাইকোর্টে। সেখানে বিচারপতি থেকে আইনজীবীরা ফুল-মালা দিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।চালু রীতি অনুযায়ী এমন দিনে এরপরেই কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। পরে একদিন মৃত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে সাড়ে তিনটেয় কর্মবিরতিও পালন করা হয়। কিন্তু শুক্রবার নজিরবিহীন ভাবে বিচারপতির দেহ হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে যেতেই বিচারপতিরা বসে পড়েন এজলাসে। বেশিরভাগ আইনজীবীও স্বাভাবিক দিনের মতো অংশ নিতে শুরু করেন শুনানিতে।
এমনকী শোকের কথা জানিয়েও তারা যে কর্মবিরতি করছে না তা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় বার অ্যাসোসিয়েশন। তার সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দলপতির কথায়, ‘শোক জানাতে গিয়ে কর্মবিরতির পথ থেকে আইনজীবীরা বেরোতে চান। তাই, এ দিনের এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।’
অথচ মৃত আইনজীবী ও বিচারপতিদের শ্রদ্ধা জানানো এবং পুলিশের হাতে এক আইনজীবীর নিগৃহের কারণ দেখিয়ে চলতি সপ্তাহের তিন দিনই সকাল সাড়ে দশটায় কাজকর্ম বন্ধ করে দেয় বার অ্যাসোসিয়েশন। যা নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ খোলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। ‘ভয়ের আবহ তৈরি করে শোকের কর্মবিরতি হচ্ছে’ বলে তিনি কাঠগড়ায় তোলেন আইনজীবীদের সংগঠনের সিদ্ধান্তকে। তারপরেই এই ভোলবদল বার অ্যাসোসিয়েশনের।
যদিও গত কয়েক দিনে বার-এর এমন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আচরণ-সহ বিভিন্ন কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে নিজের চার দশকের সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়। এতে বিড়ম্বনা বেড়েছে সংগঠনের। আশঙ্কা, আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী ওই পথে হেঁটে পদ ছাড়তে পারেন।
বর্ষীয়ান এক আইনজীবীর কথায়, ‘বিচারপতি ও আইনজীবীদের একাংশের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা এবং সংবাদমাধ্যমের ইতিবাচক সমালোচনার ফল এ দিনের কর্মবিরতি মুক্ত সচল হাইকোর্ট।’ গত রবিবার হাইকোর্টের এক আইনজীবীকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর ফাঁড়ির পুলিশ অফিসারের মারধরের ঘটনার কথা ওই রাতেই জানানো হয় মিলনকে। ওই অফিসারের শাস্তির বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন।
এক বর্ষীয়ান আইনজীবীর দাবি, পরের দিন সকালেই ওই অফিসারকে ক্লোজ় করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপের চিঠি পৌঁছয় বার-এর কর্তাব্যক্তিদের মোবাইলে। কিন্তু সেই বিষয়টি গোপন রেখে সংশ্লিষ্ট অফিসারের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতি ডাকা হয়। এমনকী অভিযুক্ত অফিসারকে নিয়ে ডামন্ড হারবারের পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামী সোমবার দুপুরে হাইকোর্টে এলে, তাঁকেও হেনস্থার অভিযোগ ওঠে।
মিলন মুখোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, ‘১৯৮৪ থেকে আমি বারের সদস্য। বর্তমান বারের নানা পদক্ষেপে আমি বিরক্ত, অপমানিত, বিড়ম্বিত হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।’ বারের সম্পাদক শঙ্কর বলেন, ‘মিলনদার মতো মানুষ সাধারণ সদস্য পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিলেও, আমরা তাঁকে ছাড়তে পারবো না। তাঁকে আমরা আজীবন সদস্য হিসেবে রেখে দেব।’