• মানহানিকর মন্তব্য করেননি মমতা, মত ডিভিশন বেঞ্চের
    এই সময় | ২৭ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন, তার মধ্যে সম্মানহানিকর কিছু রয়েছে বলে মনে করছে না কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলায় বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের সিঙ্গল বেঞ্চের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ছিল, রাজ্যপাল সম্পর্কে বেপরোয়া ভাবে কিছু মন্তব্য করা হয়েছে।আগামী ১৪ অগস্ট, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত যাতে মুখ্যমন্ত্রী-সহ এই মামলার বিবাদী পক্ষের চারজন রাজ্যপাল সম্পর্কে অসত্য ও সম্মানহানিকর কোনও মন্তব্য না-করেন, সেই ব্যাপারেও সতর্ক করে দেয় সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার এবং দলীয় নেতা কুণাল ঘোষ।

    বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যপাল সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য করা হয়েছে বলে তারা মনে করছে না। রাজ্যপালকে নিয়ে তাঁদের মন্তব্যে কোনও বাধা নেই বলেও স্পষ্ট করেছে আদালত। এই মামলায় ইতিমধ্যে সিঙ্গল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে হলফনামা চেয়ে পাঠিয়েছে।

    তারপরে মামলার বিস্তারিত শুনানি হবে বলে জানিয়েছিল হাইকোর্ট। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সব পক্ষ হলফনামা জমা দিলে সিঙ্গল বেঞ্চ ফের মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি করবে। এর আগে সিঙ্গল বেঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে জানানো হয়েছিল, ‘রাজভবনে যে কীর্তিকলাপ চলছে...’ বলে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা জেনেবুঝেই করেছেন। নারী নির্যাতন নিয়ে অনেকের অভিযোগও মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন বলে জানান আইনজীবী।

    কোন প্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী হলফনামা দিয়ে জানাতে প্রস্তুত ছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চের শুনানিতেও মমতার তরফে স্পষ্ট জানানো হয়, তিনি রাজ্যপালের উদ্দেশে সম্মানহানিকর কোনও মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর বক্তব্যের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হলেও কেন তাদেরকে এই মামলায় পক্ষ করা হয়নি, সে প্রশ্নও তোলেন আইনজীবীরা।

    সব পক্ষের সওয়াল শুনে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘বাকস্বাধীনতার অধিকার যেমন হরণ করা যায় না, তেমনই কারও সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা উচিত হবে না যাতে তাঁর মানহানি হতে পারে।’ আদালত এও বলেছে, রাজ্যপাল সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ৪ তৃণমূল নেতা, তবে কোনও মন্তব্য যেন মানহানি সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন না করে।

    এই মামলায় আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ— ‘একজন মানুষের মর্যাদা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং পবিত্র বিষয়। সেটাকে রক্ষা করার জন্য আইনে সংস্থান রয়েছে। আবার মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যায় না। যদিও এই বাকস্বাধীনতার কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চ এ দিনের নির্দেশে মত প্রকাশের অধিকার এবং সাধারণ মানুষের সত্যি জানার অধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়েছে।

    এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে এবং তার কণ্ঠরোধ করা যায় না। প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষেরও সত্যিটা জানার অধিকার আছে এবং সেই সত্যিটা যদি জনস্বার্থে হয়, তাহলে তা যে কোনও সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে আনতে পারেন— এটাও আদালত তার পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট বলেছে।’

    আইনজীবীদের একাংশের মত, ডিভিশন বেঞ্চ যে ভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অন্যদের মন্তব্যের মধ্যে সম্মানহানিকর কিছু পাওয়া যায়নি, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তিতেই মান্যতা দিল। কারণ, তিনি বারবারই জানিয়েছেন, কারও সম্মানহানি তিনি করেননি। আবার আইনজ্ঞদের অন্য একটি অংশের ব্যাখ্যা, এই মামলায় সরাসরি সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করা বা তার সঙ্গে সহমত না হয়েও সবপক্ষকে বার্তা দিল ডিভিশন বেঞ্চ।
  • Link to this news (এই সময়)