• বৈঁচিগ্রাম থেকে ধর্মতলার লেসলি ক্লডিয়াস সরণী, ফুটবল পায়ে তিন কিশোরের কঠিন সফর...
    আজকাল | ২৭ জুলাই ২০২৪
  • মিল্টন সেন: কলকাতা থেকে কয়েক যোজন দূরে পাণ্ডুয়া থানার অন্তর্গত ছোট্ট একটি গ্রাম বৈঁচিগ্রাম। অজ পাড়াগাঁ থেকে কলকাতার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে জায়গা করে নিল তিন কিশোর। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। ফুটবল পায়ে কলকাতার মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে বৈঁচিগ্রামের তিন কিশোর চাঁদ, দীপাঞ্জন এবং শিশির। ছোট থেকেই তিনজনের ধ্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে ছেলেবেলার সেই আগ্রহ ধীরে ধীরে প্রতিভায় রূপান্তরিত হতে থাকলো। তিন কিশোরকে তাঁদের স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিল পুলিশ কাকুর সহযোগিতা এবং ফুটবলার অমিতাভ দাসের কোচিং।

    দীপাঞ্জন টুডু খেলবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৫ দলে। চাঁদ ক্ষেত্রপাল এবং শিশির সরকারের সিলেকশন হয়েছে ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৩ দলে। শিশিরের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়, দরিদ্র পরিবার। দুবেলা ভালো করে খাবারের সংস্থান নেই,খেলার খরচ চলবে কি করে? সেদিকে নজর না দিয়ে, ফুটবল খেলা আর পড়াশোনা দুটোই চালিয়ে গেছে শিশির। এমন সময় ওই তিন প্রতিভাকে তুলে ধরতে পাশে দাঁড়িয়েছেন বৈঁচি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নজিরুদ্দিন আলি। সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে খুদে ফুটবলারদের বাড়ি গিয়ে বুট, ফুটবল, জার্সি ইত্যাদি দিয়ে এসেছেন তিনি। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। শিশির জানিয়েছে, সে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে খেলবে। সেখানে ম্যাচ এবং প্র্যাকটিস দুটোই হবে। সম্প্রতি ওড়িশায় খেলতে গিয়ে তাঁরা লিগ টপার হয়। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন।

    কোনওরকমে চলে সংসার। পুলিশকাকুরা এসে তাঁকে কিট দিয়ে গেছেন এটাই গর্বের। তাঁর লক্ষ্য ফুটবল খেলে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করা। দীপাঞ্জনের বাবা ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ফুটবলার তৈরি করা। ছোট থেকে ছেলেকে মাঠে নিয়ে গিয়ে অনুশীলন করাতেন তিনি। তখন থেকেই দীপঞ্জনের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ। একমাস বেলঘড়িয়ায় ফুটবলের ট্রায়ালে অংশ নেয় সে। রোজ সেখানে দু তিন ঘন্টা করে অনুশীলন করার পর পরবর্তীতে মাঠ পরিবর্তন করে ডায়মন্ড হারবারের কাছে একটি মাঠে প্র্যাকটিস করে।

    সেখান থেকে আইলিগ এবং অনূর্ধ্ব ১৫ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলার সুযোগ পায় দীপাঞ্জন। অন্যদিকে, চাঁদ জানিয়েছে, সে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৩ দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। বাড়িতে গিয়ে পুলিশ কাকুরা তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে। এটা তার কাছে খুবই গর্বের। ক্রিশ্চিয়ানো রোনান্ডোর ভক্ত চাঁদের লক্ষ্য তাঁর গুরুর মত হওয়া। তিন কিশোরের কোচ অমিতাভ দাস স্থানীয় বৈঁচী মাঠে অনুশীলন করান। তিনি জানিয়েছেন, 'গ্রামের জীবনযাত্রা খুবই কষ্টের। গ্রাম থেকে ছেলেরা খুবই কষ্ট করে কলকাতার মাঠে খেলতে যায়। তবে তাদের চেষ্টা আছে। লক্ষ্য আগামী দিনে বড় ক্লাবে খেলা।

    ছবি: পার্থ রাহা
  • Link to this news (আজকাল)