• বেআইনী নির্মাণ রুখতে কড়া আইন আসছে,জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম 
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতার গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার পর মহানগরে বেআইনি নির্মাণ রুখতে এক ঝাঁক পদক্ষেপ নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় আবারও বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছে, কলকাতা পুরসভা বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করে তা ভেঙে দিয়ে এলেও, রাতের অন্ধকারে আবারও ওই ভেঙে ফেলা অংশ তৈরি করে ফেলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

    এ ক্ষেত্রে কড়া আইন এনে অসাধু প্রোমোটারদের শিক্ষা দিতে চাইছেন মেয়র। তিনি বলেছেন, ‘‘বেআইনি বাড়ি হচ্ছে, ভাঙছি, আবার হচ্ছে। আসলে ভয় পাচ্ছে না। গার্ডেনরিচের বাড়ি ভেঙে পড়া আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, অনেক খামতি রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিধানসভায় আইন পাস করাতে হবে। বর্তমান আইনে শাস্তি সাত বছরের কম থাকায়, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠলে, লঘু আইনের ফাঁক দিয়ে অসাধু প্রোমোটাররা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। পুরসভার আইনের ৪০১ ধারাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পুরোনো আইনের ফাঁকে প্রোমোটার এবং বিল্ডাররা বেআইনি বিল্ডিং করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। আমরা আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি বিধানসভার অধিবেশনে হবে না। কারণ, আইন দফতরকে বলে আইন তৈরি করিয়ে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ করাতে হবে। তবে তা বিধানসভায় পেশ করা সম্ভব। তাই যত দিন না কঠোর আইন হচ্ছে, তত দিন পুলিশকে বলছি কড়া হাতে পরিস্থিতি দমন করতে।’’মেয়রের সুরেই কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্মাণ বেআইনি প্রমাণিত হলে জমির মালিক ও প্রোমোটারের ১০ বছরের বেশি কারাদণ্ডের বিধান থাকা উচিত। এমন আইন প্রয়োজন, যাতে অভিযুক্তেরা জামিন না পান। এমন সব কড়া বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত হলেই এই ধরনের বেআইনি নির্মাণ করার সাহস পাবেন না কোনও প্রোমোটার। এমনকি, জমির মালিকেরাও প্রোমোটারদের বেআইনি নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বলবেন।’’

    তাঁর মতে, “এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জমির মালিক ও প্রোমোটার আলাদা লোক। তাই এমন আইন আনলে উভয়েই যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন।’’নতুন আইন কী হবে, কোন কোন নিয়ম সংযোজন হবে বা বাদ যাবে, তা ঠিক করতে কমিটি গড়েছিল কলকাতা পুরসভা। সেই কমিটি ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত ‘বিল্ডিং’ আইনের খসড়া তৈরি করেছে। কমিটি তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছিল পুরসভার কাছে। মেয়র পারিষদের বৈঠকে তা পাশ হবে, তার পরে রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেয়ে নতুন সংশোধনী বিল হিসাবে বিধানসভায় পেশ করা হবে। সেই বিল পাশ হয়ে গেলে তা পাঠানো হবে রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপালের সিলমোহর পেলেই বেআইনি নির্মাণ রুখতে তা আইনে পরিণত হবে।কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৫ বছর পর পুরসভার ‘বিল্ডিং’ আইনে পরিবর্তন হবে।

    নতুন আইন প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘২০০৯ সালে বামফ্রন্টের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন শেষ বার এই আইনে বদল আনা হয়েছিল। তার পর শহরের পরিবেশ ও চরিত্র, দুয়েরই বদল হয়ে গিয়েছে। বর্তমান আইনে নিত্যনতুন সমস্যা, জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেমন পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে আইন মেনে বাড়ি বানাতে পারছেন না নাগরিকরা, তেমনই সেই সুযোগে বাড়ছে অবৈধ নির্মাণের প্রবণতা। আবার পুরনো আইনের ফাঁক গলেও বেআইনি কাজ হচ্ছে। তাই নতুন আইন তৈরি আবশ্যক হয়ে পড়েছে।’’ সেই আইন তৈরি হয়ে গেলে পুরসভাও বেআইনি নির্মাণ রুখতে বড়সড় হাতিয়ার পেয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)