‘বেলডাঙা গ্যাং’য়ের পাণ্ডা জর্দা সহ ধৃত ৩, বেশ কয়েকটি জেলায় একের পর এক গৃহস্থের বাড়িতে চুরি
বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: বছর সাতাশের যুবক ‘জর্দা’ রাজ্য পুলিসের ঘুম কেড়েছিল। একের পর এক জেলায় নিমেষের মধ্যে গৃহস্থের বাড়ি ফাঁকা করে দেওয়ায় সে ‘সিদ্ধহস্ত’। মুহূর্তের মধ্যে যে কোনও তালা ভেঙে টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিত ‘বেলডাঙা গ্যাং’। টাকা হাতে এলেই আসানসোলের লছিপুরে গিয়ে রাতভর ফুর্তি করত। সেই বেলডাঙা গ্যাংয়ের মূল পাণ্ডা সহ তিন যুবককে গ্রেপ্তার করল কাটোয়া থানার পুলিস। তারা তিন মাসে কয়েকটি জেলায় ৩৫টি বাড়িতে চুরি করেছে বলে অভিযোগ। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের নাম ওয়াজুল শেখ ওরফে জর্দা, টিলু শেখ ও আরিজুল শেখ। তিনজনেরই বাড়ি বেলডাঙা থানা এলাকায়। শনিবার ধৃতদের কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০দিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইক নিয়ে তিনজনের গ্যাংটি রাজ্যের বিভিন্ন জায়াগায় দাপিয়ে বেড়াত। যাওয়ার রাস্তায় ফাঁকা বাড়ির সন্ধান পেলেই নিমেষের মধ্যে অপারেশন চালিয়ে উধাও হয়ে যেত। কাটোয়া মহকুমার দুই থানা এলাকাতেই তারা দু’দিনে অন্তত পাঁচটি বাড়িতে হানা দিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। গত ১৫জুলাই তারা কাটোয়া থানার ননগর গ্রামে একটি বাড়িতে চুরি করে। ওইদিনই জাজিগ্রামে একটি বাড়িতে চুরি করে। ১৯জুলাই কেতুগ্রামে তিনটি বাড়িতে চুরি করেছে। তারমধ্যে একজন ভিলেজ পুলিসের বাড়িতে হানা দিয়েছিল বেলডাঙা গ্যাং। তাছাড়া পাঁচুন্দি এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে ২০-২৫ লক্ষ টাকার গয়না চুরি করেছিল গ্যাংটি।
বেলডাঙা গ্যাংয়ের এই মডিউলের মূল পাণ্ডা ওয়াজুল শেখ ওরফে জর্দা। সে তালা ভাঙার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। আলমারির লকার নিমেষেই ভেঙে ফেলত সে। তারপর ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে শুধুমাত্র সোনার গয়না ও নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিত। পুলিসের দাবি, জর্দা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কাটোয়া ছাড়াও মালদহ, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা, আসানসোল এলাকায় চুরি করেছে ধৃতরা। তাছাড়া হুগলি জেলায়ও তারা অপারেশন চালিয়েছে। জর্দাকে পাকড়াও করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল রাজ্য পুলিস। কিন্তু সে একাধিকবার মোবাইল সিম পরিবর্তন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার জর্দা ও তার ধৃত দুই সঙ্গী একটি বাইক নিয়ে বহরমপুর থেকে পুরুলিয়া গিয়ে অপারেশন চালায়। তারপর তারা ফুর্তি করতে আসানসোলের লছিপুরে যায়। শুক্রবার লছিপুর থেকে আবার বাইক নিয়ে তারা বুদবুদের দিকে যেতেই পুলিসের জালে পড়ে যায়। তদন্তকারীরা জানান, ধৃতরা অপারেশনের সময়ে মাস্ক পরে থাকে। পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে একটিমাত্র মোবাইল ব্যবহার করে। কিন্তু কাটোয়া থানা এলাকায় সিসি ক্যামেরায় জর্দার কেরামতি ধরা পড়ে যায়। তারা এক ‘মক্ষীরানি’র কাছে চুরি করা সোনার গয়না বিক্রি করত। তার খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিস। অপারেশন শেষ হলেই জর্দা নেশা আর ফুর্তির পিছনে টাকা ওড়াত।