• মোটা অঙ্কের লোনের টোপ দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
    বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সহজ শর্তে মোটা অঙ্কের লোনের অফার। এই টোপ গিলে ময়না, তমলুক, পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাটে চারশোর বেশি মহিলা কোটি টাকার বেশি প্রতারণার শিকার হলেন। অভিযুক্ত ময়না থানার পূর্ব-দক্ষিণ ময়না গ্রামের শুভেন্দু মিশ্রকে মহিষাদল থেকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। মহিষাদলে দ্বিতীয়পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে লুকিয়েছিল প্রতারণায় অভিযুক্ত ওই যুবক। শনিবার মহিষাদল থানার পুলিস গিয়ে তাকে আটক করে। তারপর ময়না থানার পুলিস তাকে নিজেদের থানায় এনে গ্রেপ্তার করে। শনিবার শুধুমাত্র ময়না থানায় অভিযোগ করার পর শতাধিক মহিলা লাইন দিয়েছিলেন। ধৃত যুবকের প্রতারণার কৌশল শুনে তাজ্জব পুলিস অফিসাররাও। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ, রবিবার তাকে তমলুক আদালতে তোলা হবে।


    ময়না থানার ওসি সোমনাথ শীট বলেন, শুভেন্দু মিশ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে সাধারণ মহিলাদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।


    জানা গিয়েছে, পূর্ব-দক্ষিণ ময়না গ্রামের ওই যুবক ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঋণ নিতে আগ্রহী মহিলাদের খুঁজত। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদেরও ঋণের টোপ দিত। ঋণ নিতে আগ্রহী মহিলাদের শিকার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থা থেকে প্রথমে ছোট অঙ্কের লোন ইস্যু করা হতো। সেই টাকা তক্ষুণি পরিশোধ করলে পাঁচ থেকে দশগুণ পর্যন্ত লোনের অফার দিত সে। এলাকার মহিলা এবং তাঁদের স্বামী এভাবে ৫০হাজার, এক লক্ষ, দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ তোলার পরই শুভেন্দুর হাতে তুলে দিতেন। যদিও ধৃত যুবক ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ।


    সম্প্রতি ময়নার কিশোরচক, পূর্ব-দক্ষিণ ময়না, দক্ষিণ ময়না, তমলুক থানার শ্রীরামপুর, কোলাঘাট থানার মেচেদা এবং পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মহিলাদের ঋণের কিস্তি মেটানোর নোটিস গিয়েছে। নোটিস পেয়ে তাঁদের কার্যত কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা। ব্যাঙ্ক থেকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, ঋণ নিলেও কিস্তি শোধ করা হয়নি। তা‌ই বাড়ি বাড়ি নোটিস দেওয়া হচ্ছে। এরপর মহিলারা ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারেন, শুভেন্দু মোটা অঙ্কের ঋণের টোপ দিয়ে নগদ টাকা নিলেও শোধ করেনি। ময়না থানার কিশোরচক গ্রামের তাপস বাগের স্ত্রী বুল্টি সিংহ বাগকে তিনটি লোন বাবদ ১লক্ষ ৩০হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারপর পাঁচ লক্ষ টাকা লোন মঞ্জুর করিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে পুরো টাকাটাই বুল্টিদেবীর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অথচ, তারপর কোনও লোন মঞ্জুর হয়নি। ব্যাঙ্ক থেকে কিস্তি মেটানোর নোটিস বাড়িতে দিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্মী। তাপসবাবু বলেন, পুরোটা‌ই একটা পরিকল্পিত জালিয়াতি। এভাবে প্রচুর মহিলা ঠকে গিয়েছেন। শ্রীরামপুরে একই পরিবারের চারজন মহিলা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।


    ময়না-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বুদ্ধদেব পড়িয়া বলেন, আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অনেকেই এভাবে প্রতারণা করছেন। তারপর মোটা টাকা হাতিয়ে বাড়ি ছাড়া হচ্ছেন। এধরনের প্রতারণা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শুভেন্দুও এরকম কাজ করেছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)